আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্প

খাল ভরাট করে সড়ক সম্প্রসারণ!

শামীম রাহমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। মহাসড়কটির আশুগঞ্জ অংশের পূর্ব পাশে পড়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আশুগঞ্জ-পলাশ অ্যাগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের বরোপিট খাল। খালের বিভিন্ন স্থানে ক্রসবাঁধ দিয়ে বালি ভরাট করে মহাসড়কটি চার লেনে সম্প্রসারণের কাজ করছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে সেচ কার্যক্রম, যা স্থানীয়ভাবে সবুজ প্রকল্প নামে পরিচিত।

বিষয়টি উল্লেখ করে সম্প্রতি সওজের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে বিএডিসি। চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বরোপিট খালটি বিএডিসি আশুগঞ্জ-পলাশ অ্যাগ্রো ইরিগেশন (পঞ্চম পর্যায়) প্রকল্পের সেচ খাল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহূত হয়ে আসছে। মহাসড়কটির আশুগঞ্জ অংশে কিছুদিন আগে চার লেনে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে খালের বিভিন্ন স্থানে ক্রসবাঁধ দিয়ে বালি ফেলা হয়েছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের কাছে সড়ক বিভাগের কালভার্ট নির্মাণের জন্য বিএডিসির প্রায় ১০ মিটার খাল অপসারণ করে ফেলা হয়েছে। আরো কয়েকটি স্থানে এরূপ খাল অপসারণের পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছে বিএডিসি। অবস্থায় খাল অপসারণের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা না হলে চলতি সেচ মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলমান জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়বে।

চিঠিতে খালটি ভরাট না করে প্রশস্ততা বাড়িয়ে আট মিটার করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএডিসি। অন্যদিকে সওজ বলছে, অধিগ্রহণ করা জমিতে বিএডিসির প্রস্তাবিত আট মিটার প্রশস্ততায় খাল নির্মাণ করা যাবে না। সেচ খালটি স্থানান্তর করে তা চার মিটার প্রশস্ততায় নির্মাণের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।

উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনের পর এক প্রতিবেদনে মহাসড়কটির প্রায় ১১ কিলোমিটার অংশের নকশা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিনিধি দলটিও সেচ খালটি আট মিটার প্রশস্ততায় উন্নীত করা সম্ভব হবে না বলে মত দিয়েছে। পরে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিএডিসি প্রস্তাবিত খালের প্রশস্ততা আট মিটারের পরিবর্তে চার মিটার করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সওজের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, কৃষিকে ব্যাহত না করেই তারা মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে চান। এজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে চাইছেন তারা। তাদের ভাষ্যমতে সমন্বয় না থাকলে একদিকে যেমন সেচ কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে, তেমনি বাধাগ্রস্ত হবে সড়ক উন্নয়ন কাজও।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএডিসির চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আশুগঞ্জের সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সেচ প্রকল্পগুলোর একটি। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সেচ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আমাদের প্রকল্প যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটিও জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিষয়টি সমাধানে সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে একটি প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ করেছে। আমরা চাই, সেচ খালটিও থাকুক। একই সঙ্গে সড়ক সম্প্রসারণও হোক। সে লক্ষ্যেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা হচ্ছে।

আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল-ধরখার হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে আশুগঞ্জ-ধরখার অংশটি দুই পাশে ধীরগতির গাড়ি চলাচলের জন্য পৃথক দুটি লেনসহ দুটি প্যাকেজের আওতায় চার লেনে উন্নীত করা হবে মহাসড়কটি। প্রথম প্যাকেজে পড়েছে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল অংশ। প্যাকেজ--এর অধীন ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশটির নির্মাণ ব্যয় ৫৭২ কোটি টাকা। অন্যদিকে সরাইল-ধরখারের (প্যাকেজ-) ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা।

চার লেনে উন্নীতের পর মহাসড়কটির প্রশস্ততা হবে প্রায় ১১৪ ফুট। প্রকল্পের অধীনে ১৬টি সেতু, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস, তিনটি আন্ডারপাস, ৩৬টি কালভার্ট, ১০টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বাজার এলাকায় সব মিলিয়ে দশমিক ২৬ কিলোমিটার রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ পেয়েছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এফকনস আশুগঞ্জ থেকে ধরখার পর্যন্ত মহাসড়কের উন্নয়ন করবে, যার দৈর্ঘ্য ৩৯ কিলোমিটার। অংশ নির্মাণে খরচ হচ্ছে হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে ভারতের নমনীয় ঋণ সহায়তার (এলওসি-) মাধ্যমে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে হাজার ২৫৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে ভারত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন