ভাসানচরে গেলেন ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানান্তরের প্রথম ধাপে কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার একটি দল নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে গতকাল। উখিয়ার আশ্রয়শিবির থেকে গত বৃহস্পতিবার বাসে করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছিল তাদের। এরপর গতকাল সকালে সাতটি জাহাজ তাদের নিয়ে ভাসানচরে রওনা হয়। বেলা ২টার দিকে দ্বীপটিতে পা রাখে নির্যাতনের মুখে রাষ্ট্রহারা এসব মানুষ।

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২৩১২ কোটি টাকা, যার পুরোটাই নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করেছে সরকার। মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে আগেই ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

তবে সরকারের এ উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই জানিয়ে বুধবার বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার যে পরিকল্পনা সরকার করেছে, তার সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। ভাসানচরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যেন সব তথ্য জেনে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। 

বিবৃতিতে বলা হয়, এ স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যও নেই। জাতিসংঘের কাছ থেকে এমন বিবৃতি আসার একদিন পর বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে সরকারের দাবি, ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রথম দফায় যেসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হলো, তাদের জন্য খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ অন্তত এক মাসের রসদ দ্বীপটিতে মজুত রাখা হয়েছে। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য এক বছরের রসদ মজুত করা হবে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য নানা ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে দেশী-বিদেশী ২২টি সাহায্য সংস্থাকে যুক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই সংস্থাগুলোর শতাধিক কর্মী এখন ভাসানচরে অবস্থান করছেন।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য বুধবার রাতে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার বাসে করে মোট পাঁচটি কনভয়ে উখিয়া থেকে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর রাতে তাদের রাখা হয় বিএএফ জহুর ঘাঁটির বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে। শুক্রবার সকালে তাদের নৌবাহিনীর ছয়টি এবং সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয় ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জাহাজের ডেকে বেঞ্চ বসিয়ে সবার বসার ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে নৌবাহিনীর দুটো জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের ১০১৯টি লাগেজ বৃহস্পতিবারই ভাসানচরে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। শুক্রবার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের আরো আটটি জাহাজ কনভয়ের সঙ্গে ভাসানচরে যায়।

নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমকেজেড শামীম সাংবাদিকদের জানান, সকাল সোয়া ১০টার পর চট্টগ্রামের বোট ক্লাব, আরআরবি জেটি ও কোস্টগার্ডের জেটি থেকে জাহাজগুলো ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। তাদের সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। সড়ক ও আকাশপথে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ ও র্যাব। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন