বাংলাদেশ সফর নিয়ে স্টিফেন বাইগান

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস) নিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি এক রকম বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বাইগান। নিজের বাংলাদেশ ভারত সফর শেষে এশিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় এক টেলিকনফারেন্সে কথা বলেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর টেলিকনফারেন্সের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ সফর সফল হয়েছে জানিয়ে স্টিফেন বাইগান বলেন, বাংলাদেশে এটাই আমার প্রথম সফর। ঢাকায় আমাকে খুবই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। আমার সফরের উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে দুই দেশের সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করা যায়। সফরকালে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিজ্ঞান সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কীভাবে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একত্রে কাজ করতে পারি তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিষয়ে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম এবং ঐকমত্যভিত্তিক।

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠতম কূটনীতিক তার দেশে দ্রুত ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) রফতানি করায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের জন্য সুরক্ষামূলক সামগ্রী উৎপাদনে আমরা নিজেরাও যখন পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি, তখন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, গত মে মাসে, বাংলাদেশের বেক্সিমকো টেক্সটাইলস ক্রয়াদেশ পাওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে ৬৫ লাখ পিপিই গাউন রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে স্টিফেন বাইগান বলেন, অর্থনৈতিক ইস্যু তথা বাণিজ্য বিনিয়োগ আরো কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, যা দুই দেশের বেসরকারি খাত এগিয়ে নিয়ে যাবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে দুই দেশের বেসরকারি খাত একটি রোডম্যাপও তৈরি করেছে।

ঢাকায় বাইগানের সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনায় মিলিত হন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি কেইথ ক্র্যাচ। বিষয়টি উল্লেখ করে বাইগান বলেন, আমি জনাব রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের অত্যন্ত আকর্ষণীয় সফল একজন ব্যক্তিত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান রহমানের বিপরীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি কেইথ ক্র্যাচকে মনোনীত করেছেন। তারা দুজন একসঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি রূপকল্প প্রস্তুত করেছেন, যেটি আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো গভীর করতে সত্যিকার অর্থে ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা সফরকালে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আট লাখ রোহিঙ্গা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে টেলিকনফারেন্সে জানান মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কীভাবে সংকট সমাধানে একে অন্যকে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কাজ করবে। অঞ্চলের সব দেশকে বিষয়ে বাংলাদেশের মতো উদারতা দেখাতে হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে একই সুরে মিয়ানমার সরকারকে বার্তা দিতে হবে, বিশেষ করে চীনকে।

রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর অত্যাচার হয়েছে বিষয়ে আমরা একমত এবং এর নিন্দা জানাই। এছাড়া শুধু নিরাপদ

নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নয়, রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেই পরিস্থিতি নিশ্চিতে আমরা মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছি।

ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থার বিষয়ে মার্কিন অবস্থান কী? জানতে চাইলে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বাইগান বলেন, বাংলাদেশ সফরে দেশটির সরকারের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া দেশটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্বাধীন গণমাধ্যমের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের পথেই রয়েছে। গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যেতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ নেতৃত্ব স্থানে রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশে সামরিক শাসনসহ কু হয়েছে। তার পরও গণতন্ত্রকে নিখুঁত করা সংকটের মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পর্ক গভীর করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের উৎসাহ দেবে সহযোগিতা করবে, যার মাধ্যমে গণতন্ত্রের সম্ভাব্য সেরা রূপ পেতে পারে বাংলাদেশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন