দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল। এর মধ্যে ২২ জনই পুরুষ। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ হাজার ১৯৩। গতকাল বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বশেষ ২২ জনসহ দেশে এখন পর্যন্ত কভিড আক্রান্ত হয়ে পুরুষ রোগী মারা গিয়েছে ৪ হাজার ১৮ জন আর নারী মারা গিয়েছে ১ হাজার ১৭৫ জন।
মৃতদের বয়স বিভাজনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের সবাই চল্লিশোর্ধ্ব। এদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী রয়েছেন চারজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের নয়জন এবং ষাটোর্ধ্ব বয়সের মারা গেছেন ১৯ জন। দেশে করোনায় ষাটোর্ধ্ব বয়সের মানুষই বেশি মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত এই বয়সী ২ হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃতের ৫০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী দেড় হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ বয়সের ১ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃতের ২৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ঢাকা বিভাগেই, ২৫ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনজন করে এবং ময়মনসিংহ বিভাগে একজন মারা গেছে। খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর এই চার বিভাগে এদিন কেউ মৃত্যুবরণ করেনি।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরো ১ হাজার ৪০৭ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৫৫৫। দেশের ১০৬টি পরীক্ষাগারের তথ্য তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১১ হাজার ২৮৪টি নমুনা সংগৃহীত হয়েছে। আগের কিছু নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১১ হাজার ৯২২টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯ লাখ ২১ হাজার ৩৮২টি।
এদিকে একদিনে আরো ১ হাজার ৫৮২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। এতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৩-এ। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন সক্রিয় রোগী রয়েছে ৮৮ হাজার ৪৮২ জন।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম আক্রান্ত শনাক্তের পর দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বিশ্বের অধিকাংশ এলাকা। এখন পর্যন্ত বিশ্বে ৩ কোটি ৩৩ লাখের বেশি লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সারা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ১০ দিন পর ওই মাসের ১৮ তারিখে প্রথম মৃত্যুর খবর জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
করোনায় প্রাণহানি ১০ লাখ ছাড়িয়েছে: নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক মৃত্যু বেড়েই চলেছে। গতকাল বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মোট ১০ লাখ ৩ হাজার ১৯১ জন কভিড-১৯ রোগী মারা গেছে। আর সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৪। এদিকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ হিসাব বলছে, বিশ্বে মোট কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৮ জন। আর মারা গেছে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮৯ জন।
অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যানে, করোনা মহামারী সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে। সেখানে ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৩ জন সংক্রমিতের বিপরীতে মারা গেছে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৩২ জন। অর্থাৎ বৈশ্বিক মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশই হয়েছে এ অঞ্চলে।
একক দেশ হিসেবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয় দিক থেকেই শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪০৫। মারা গেছে ২ লাখ ৯ হাজার ৪৭০ জন। প্রাণহানির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো ও ব্রিটেন। আর সংক্রমণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও শীর্ষ পাঁচে রয়েছে যথাক্রমে ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও কম্বোডিয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বের সব দেশ সমন্বিতভাবে আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে কভিড-১৯ রোগে প্রাণহানি দ্বিগুণ হয়ে ২০ লাখে উন্নীত হতে পারে। সংস্থাটির জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেছেন, ‘১০ লাখ ভয়ংকর একটি সংখ্যা। এটি ২০ লাখে উন্নীত হওয়ার আগেই আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা কি তার জন্য প্রস্তুত?’
চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর প্রায় ১০ মাসের মাথায় মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াল। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিসংখ্যানে সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা আরো বেশি হতে পারে। কারণ অনেক দেশেই করোনা পরীক্ষার হার অনেক কম। এর ফলে ভাইরাসের কারণে অনেক মৃত্যুরই তথ্য পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।
ভারতে সংক্রমণ ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে: ভারতে কভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে ৯৫ হাজারের বেশি মানুষের।
গতকাল ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৮২ হাজার ১৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে সেখানে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৭০২। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ১ হাজার ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এতে মহামারীতে ভারতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৫৪২।