অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক I চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর গতকাল বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় চলা বিক্ষোভের চারদিনের মাথায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। গতকাল একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২২ এপ্রিল মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের অকালমৃত্যুতে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তক্রমে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম (পরীক্ষাসহ) বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেয়া হয়। 

এদিকে হল ছাড়ার নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর পরই তারা ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় থাকা শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চুয়েটের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ করা এবং দাবি আদায় না করার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা ক্যাম্পাস ছাড়ছি না।’ 

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গতকাল রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ১১টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী ২০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৈঠক শেষে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর অবরোধ তুলে নেয়া হলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ঘাতক চালককে গ্রেফতারের দাবি পূরণ হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তহবিল গঠন করবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক প্রশস্তের কাজ দ্রুত শুরু করার বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হবে। ফলে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. রাশেদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানান, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করায় শুক্রবার সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে। এতে হল ছাড়ার বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে গত সোমবার বিকালে বেপরোয়া গতির শাহ আমানত পরিবহনের একটি যাত্রীবাসী বাসের ধাক্কায় নিহত হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন। গুরুতর আহত হন জাকারিয়া হিমু। 

দুর্ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আন্দোলনে নামেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। ঘটনার দিন সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করে পুড়িয়ে দেয়া হয় শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস। পাশাপাশি আরো দুটি বাসে ভাংচুর চালানো হয়। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীর। পরে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। এরপর ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন