মানুষ এখন আবাসন খাতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে চাইছে

বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেই এখন কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের নেতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান। কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় পরিবর্তন এসেছে মানুষের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগসংক্রান্ত আচরণেও। দেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম রূপায়ণ গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন বণিক বার্তার। কথা বলেছেন খাতটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু তাহের

আবাসন ব্যবসায়ে করোনা মহামারীর কী ধরনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে?

মহামারীর কারণে সব ধরনের ব্যবসা এখন নিম্নমুখী। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই আবাসন ব্যবসায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে কিছু দেশে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিও রয়েছে। সেসব দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আবাসন ব্যবসায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রথম কারণ হলো মানুষ নিজের পুঁজিটাকে এখন আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। এখানে বিনিয়োগ করে ভালো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে সম্ভাবনাকে তারা কাজে লাগাতে চাচ্ছে। অনেক গ্রাহক মনে করছে একটি বাড়ি কিনে সেটি ভাড়া দিলে সেখান থেকে ভাড়া আসবে, সেটাকে এক ধরনের বিনিয়োগ হিসেবে নিচ্ছে তারা।

দ্বিতীয়ত, পুঁজি থেকে আরো বেশি মুনাফা বাড়িয়ে নেয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে অনেকে জমি বা ফ্ল্যাট দেখিয়ে ব্যাংকের ঋণ বা জামানত কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে ওই গ্রাহক সে সম্পত্তি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে বড় ধরনের ঋণ নিতে পারছে। এখানে নিজের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি হিসেবে ঋণ সুবিধাটা পেয়ে যাচ্ছে। তবে এটা যে পুরো আবাসন খাতের চিত্র, সেটা আমি বলব না। সুনির্দিষ্ট কিছু সুবিধা এখান থেকে নিতে পারছে অনেকে।

মহামারীর আগে মহামারী চলাকালে গ্রাহকের মধ্যে বিনিয়োগ নিয়ে ঠিক কী ধরনের মনোভাব দেখা যাচ্ছে?

করোনাকালে আবাসন খাতের বাজার এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে বলে আমি মনে করি। কিছু গ্রাহক সময়টিতে বিনিয়োগ করছেন চিন্তাভাবনা করে। আবার কিছু গ্রাহক পুরোপুরি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দ্বিমুখী মনোভাব তো কিছুটা আছেই। অন্য ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, আবাসনের সঙ্গে যাদের কোনো সংযুক্তি ছিল না, তারাও এখন এখানে আসার পরিকল্পনা করছেন।

আবাসন ব্যবসায়ে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একজন তরুণ উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী হিসেবে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন?

আবাসন খাতে মূল চ্যালেঞ্জ হলো মানুষ অর্থনীতিটাকে একটা পজিটিভ জায়গায় চিন্তা করতে পারে না। আমরা যারা ব্যবসায়ী আছি, তাদের মধ্যে নানা সংকটে-ঝুঁকিতে নিজেদের টিকিয়ে রাখার এক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এটি শুধু আবাসন ব্যবসা নয়, সব ধরনের ব্যবসায়েই রয়েছে। তবে এখানে মার্জিনটা বড়। তাই চ্যালেঞ্জটাও অনেক বেশি। তবে এসব সংকট মোকাবেলায় মানসিক প্রস্তুতি থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

রূপায়ণ সিটি উত্তরা নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসন খাতে নতুন একটি রূপরেখা দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। কী সে রূপরেখা?

রূপায়ণ সিটি বাংলাদেশের প্রথম সিটি ব্র্যান্ড এর মাধ্যমে দেশের আবাসন খাতে প্রথম শহর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এর আগেও আমরা আবাসনে ছোট ছোট শহর গড়ে তুলেছি। কিন্তু এসব শহরে বিল্ডিং গড়ে তুললেও আসলে মানুষের জীবনমানটাকে ভালোভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। রূপায়ণ সিটি উত্তরা প্রকল্পের আওতায় মূলত খেলার মাঠ, রাস্তাঘাট, শপিং মল, সুইমিংপুল, মসজিদ, পার্ক, হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সামাজিক যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, সেগুলো যাতে মানুষ শহরের জীবনেও পেতে পারে; তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। যেখানে সব ধরনের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকবে।

নতুন আবাসন সিটি কোন ধরনের মানুষের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে?

প্রকল্পটি আমরা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কথা চিন্তা করে হাতে নিয়েছি। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তরাও এখানে নিজের বাসস্থান করার সুযোগ-সুবিধা পাবেন। প্রত্যেকটা স্তরেই রুচিশীল মানুষ এখানে নিজের স্বপ্নটাকে সাজাতে পারবেন। নিজের পরিবারকে নিয়ে যারা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, তাদের জন্যই মূলত রূপায়ণ সিটি উত্তরা প্রকল্প।

আবাসন ব্যবসার ভবিষ্যৎ কী?

মানুষের জীবন-জীবিকা আগামীতে যেদিকে যাচ্ছে, সেটা চিন্তা করলে আবাসন ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্বল। আগামীতে মানুষ নিজের থাকার জন্য কিংবা ব্যবসায়ীরা নিজেরা খাতে বিনিয়োগ করে নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা রূপরেখা প্রণয়ন করতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন