ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশী নাগরিক

প্রচলিত গন্তব্যের বাইরের দেশগুলোয় আবেদন বাড়ছে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ইউরোপের প্রচলিত গন্তব্যের বাইরের দেশগুলোয় বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক আবেদন বাড়ছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার পরিসংখ্যান নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রজোটটির পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট। এতে দেখা যায়, প্রচলিত গন্তব্যের বাইরের দেশগুলোয় এখন বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া সাইপ্রাসের মতো দেশগুলোয় গত বছরও রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আবেদন করেছেন বাংলাদেশীরাই।

ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে ১২ হাজার ৩০০ বাংলাদেশী। এর মধ্যে সাইপ্রাস, স্লোভাকিয়া স্লোভেনিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশ তিনটির মধ্যে সাইপ্রাসে হাজার ২১৫ জন, স্লোভাকিয়ায় ১৫ স্লোভেনিয়ায় ১৭৫ জন বাংলাদেশী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। অন্যদিকে প্রচলিত গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত ফ্রান্সেও সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন এসেছে বাংলাদেশীদের কাছ থেকে। গত বছর দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন হাজার ৮১০ জন বাংলাদেশী।

বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ইউরোপের প্রচলিত গন্তব্যগুলোয় রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া এখন অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালির মতো প্রচলিত গন্তব্যগুলোয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া এসব দেশ এখন একেকটি আবেদন নিষ্পত্তিতে অনেক বেশি সময়ও নিচ্ছে। ফলে বৈধভাবে ইইউতে বসবাসের উদ্দেশ্যে অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোকে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশীরা। কারণ ইইউর কোনো একটি সদস্য দেশের নাগরিকত্ব পেলেই জোটটির অন্তর্ভুক্ত যেকোনো দেশে বৈধভাবে কাজ বসবাসের সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে তার মানে এই নয়, প্রচলিত গন্তব্যগুলোয় বাংলাদেশীদের আবেদন নেই।

ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর করোনার মধ্যেও ইউরোপের গন্তব্যগুলোয় বাংলাদেশীদের আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্রান্সে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। একই সময়ে গ্রিস  ইতালিতে আবেদন বেড়েছে যথাক্রমে ২১ ১৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে ইইউতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বাংলাদেশীদের আবেদনের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ২০০।

এছাড়া গত বছর হাজার ৫৭৫ জন বাংলাদেশীকে ইইউ ছাড়ার আদেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে সংখ্যা ছিল হাজার ৮৩০।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ইইউভুক্ত দেশগুলোয় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন লাখ হাজার ৯৯৫ জন বাংলাদেশী। তাদের বেশির ভাগই আবেদন করেছেন ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, জার্মানি ইত্যাদি প্রচলিত গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত দেশগুলোয়।

ইইউভুক্ত দেশগুলো বর্তমানে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে বেশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। অবৈধ অভিবাসীদের ইউরোপ থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রজোটটির সদস্য দেশগুলো। এক্ষেত্রে যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করবে, সেসব দেশের নাগরিকদের জন্য ইইউর ভিসা সীমিত করে দেয়া হবে। ২০১৪ সাল থেকে অভিবাসীদের নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইইউ। দীর্ঘ সময় ধরে অনুপ্রবেশকারীরা প্রধানত মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে সেখানে প্রবেশ করেছে। তাদের বেশির ভাগই সমুদ্রপথে ইতালি হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। পথে আসাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ নাইজেরিয়ার নাগরিক। অবৈধ মানব পাচার ঠেকাতে বর্তমানে পথটি বন্ধ করে দিয়েছে ইইউ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন