আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে কড়াকড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম ঢালাওভাবে বিক্রি করবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি পাঁচটি উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণহারে ফরম সংগ্রহ করার পরিপ্রেক্ষিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বণিক বার্তাকে বলেন, দলের সর্বক্ষেত্রে একটা শৃঙ্খলা থাকা দরকার। একটা নিয়ম থাকা দরকার। আমরা দেখেছি, জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে একটি আসনে ৫৬টি ফরমও বিক্রি হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের ফরম কেনার মধ্যে মানুষ আভিজাত্য খুঁজে বেড়ায়। এটি তারা একটা ক্রেডেনশিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেন। কাজেই আমরা সর্বক্ষেত্রে একটা নিয়মনীতি আনতে চাচ্ছি। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি তফসিল ঘোষিত জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ১৬ সেপ্টেম্বর ফরম বিতরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ শুরু হবে। চলবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহের লাগাম টানতে দলীয় গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে কারা ফরম কিনতে পারবেন -সংক্রান্ত একটি নোটিস দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত রেজল্যুশনে প্রার্থীর নাম প্রেরণ ব্যতীত ফরম বিতরণ করা যাবে না। অর্থাৎ জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে সেসব মনোনয়ন প্রত্যাশীর নামের তালিকা পাঠানো হবে তারাই কেবল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৮ অনুচ্ছেদের এর ধারায় আছেজেলা, উপজেলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের (মোট ছয়জনের) যুক্ত স্বাক্ষরে প্রার্থীদের যোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, জনপ্রিয়তা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে কমপক্ষে তিনজনের সুপারিশ মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠাবেন। ধারায় রয়েছেউল্লিখিত ছয়জনের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য হলে তা সুপারিশের সঙ্গে উল্লেখ করতে পারবেন।

বিষয়ে চাইলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, এটা আমাদের গঠনতন্ত্রেই রয়েছে। গঠনতন্ত্রের বিষয়টি আমরা হুবহু লিখেছি। তিনি বলেন, উপজেলা জেলা পরিষদের ফরম কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা যাবে। আর ইউনিয়ন পরিষদের জন্য ওই ইউপি, সংশ্লিষ্ট উপজেলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে নাম আসতে হবে। তারপর আমরা ফরম দেব।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের মতো উপজেলা পরিষদেও একই ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ পাঁচটি আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণ করেছিল, তাতে আগ্রহী ১৪১ জন ফরম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা-১৮ আসনে সর্বোচ্চ ৫৬ জন। সংখ্যার বিচারে তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও বেশি ছিল। এছাড়া নওগাঁ- আসনে ৩৪ জন, পাবনা- আসনে ২৮ জন, ঢাকা- আসনে ২০ এবং সিরাজগঞ্জ- আসনে জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

ঢালাওভাবে ফরম সংগ্রহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে খানিকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকেও বিষয়টির কঠোর সমালোচনা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে বিধানটি আগেও ছিল। কিন্তু নানা কারণে তার প্রয়োগ হয়নি হয়তো। আর এর সুযোগ নিয়েছে অনেক সুবিধাবাদী। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের অনেকেই জানেন তারা মনোনয়ন পাবেন না। কিন্তু ফরম দেখিয়ে তারা বিভিন্ন তদবির করছে। এতে দলের শৃঙ্খলাও নষ্ট হচ্ছে। তাই এসবের লাগাম টেনে ধরতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এখন গণহারে যার খুশি সেই মনোনয়ন ফরম কিনবেএটা তো হতে পারে না। তৃণমূলের নেতাদের তো জানা থাকা দরকার কারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হিসেবে মনোনয়ন কিনছেন। এজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন