যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ৫ কর্মকর্তার নেতৃত্বে চলে নির্যাতন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি যশোর

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঁচ কর্মকর্তার নেতৃত্বে কিশোর বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে তিন কিশোর নিহত ১৫ জন আহত হয়। পুলিশ ওই পাঁচ কর্মকর্তাকে আটক করেছে। এছাড়া মারপিটে অংশ নিয়েছিল কর্মকর্তাদের অনুগত সাত-আটজন কিশোর বন্দি। চুল কাটা নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই মারপিট করা হয়। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হতাহতের ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে প্রাথমিক তদন্তের এসব তথ্য জানান যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান। এর আগে গত শুক্রবার ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হলে মামলার পর রাতে পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গতকাল তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসান।

যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয় আগস্ট। এদিন কিশোর বন্দি হূদয়কে (যে চুল কাটায় পারদর্শী) চুল কেটে দিতে বলেন কেন্দ্রের নিরাপত্তাপ্রধান (হেড গার্ড) নূর ইসলাম। ঈদের আগে হূদয় প্রায় ২০০ বন্দির চুল কাটায় তার হাত ব্যথা উল্লেখ করে চুল কাটতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নূর ইসলাম কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহের কাছে অভিযোগ করেন, ওরা ট্যাবলেট খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে রয়েছে। সেখানে উপস্থিত কিশোর নাঈদ অভিযোগ শুনে বিষয়টি পাভেলকে জানিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাভেল তার কিছু অনুসারী কিশোরকে নিয়ে নূর ইসলামকে মারপিট করে। এতে তার হাত ভেঙে যায়। ঘটনার সূত্র ধরেই ১৩ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

তিনি জানান, জাতীয় শোকদিবস পালন উপলক্ষে ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সভায় নূর ইসলামের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনাক্ত হামলাকারী ১৩ জনসহ আরো কয়েকজনকে বের করে আনা হয়। ওই পাঁচ কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের আজ্ঞাবহ সাত-আটজন কিশোর বন্দি অভিযুক্তদের মারপিট শুরু করেন। মুখে গামছা ঢুকিয়ে জানালা দিয়ে হাত বাইরে বের করে টেনে ধরে পেছনে বেধড়ক মারপিট করা হয়। লোহার রড, ক্রিকেট স্টাম্প ইত্যাদি দিয়ে বেপরোয়া মারপিট করা হয়। অচেতন হয়ে গেলে বন্ধ করে ফের জ্ঞান ফিরলে মারপিট করা হয়। নির্যাতনের শিকার কিশোরদের দুপুরে খাবার না দিয়ে, চিকিৎসা না দিয়ে গরমের মধ্যে গাদাগাদি অবস্থায় ফেলা রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে আরো দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হলে তারাও মারা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন