বছরে নষ্ট ১ কোটি ৮০ লাখ টন

ডাইনারদের খাদ্য অপচয় রোধে চীনে ক্যাম্পেইন

বণিক বার্তা ডেস্ক

রেস্তোরাঁয় গিয়ে অতিরিক্ত অর্ডারের পাশাপাশি চীনা ডাইনাররা যে পরিমাণ খাবার নষ্ট করেন, তা নিয়ে চিন্তিত দেশটির সরকার। এক হিসাব অনুযায়ী বছরে চীনের বড় শহরগুলোর রেস্তোরাঁয় মোট খাবার নষ্ট হয় প্রায় দুই কোটি টন। ফলে করোনাকালে অপচয় রোধে ভোজনরসিকদের খাবারের অর্ডার কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি তা নষ্ট না করার জন্য নির্দেশনা দিতে অপারেশন এম্পটি প্লেট নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য পরিবারের সঙ্গে কিংবা দলগতভাবে খেতে গিয়ে চীনাদের অতিরিক্ত খাবার অর্ডারের সংস্কৃতি বদলে দেয়া। খবর এএফপি।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে শি জিনপিংকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, খাবারের অপচয় সত্যিকার অর্থেই বিরক্তিকর হতবাক করার মতো বিষয়। আর চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা জারি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব সব দিক দিয়েই আরো বহুদিন বহু বিষয়ে ভোগাবে। বিষয়ে সবাইকে এখনই সতর্ক হতে হবে।

এরই মধ্যে আঞ্চলিক ক্যাটেরিং গ্রুপগুলো শিয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। তারা তথাকথিত এন-ওয়ান পলিসি অনুযায়ী দলবদ্ধ ক্রেতাদের তাদের দলের মোট সদস্য সংখ্যার চেয়ে প্রতি টেবিলে একটি পদের অর্ডার কম করার জন্য অনুরোধ করছে। এছাড়া ক্যাম্পেইনে রেস্তোরাঁগুলোয় একা খেতে এসেছে এমন ডাইনারকে স্বাভাবিকের থেকে কম কিংবা অর্ধেক খাবার পরিবেশন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে এক প্রতিবেদনে দ্য চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস দাবি করে, রেস্তোরাঁয় গড়ে একজন ডাইনার প্রতিবার খাওয়ার সময় ৯৩ গ্রাম খাবার নষ্ট করে। এর মানে হলো, প্রতি বছর চীনের বড় শহরগুলোয় কোটি ৮০ লাখ টন খাবার ফেলে দিতে হয়। তবে আশার কথা, করোনা সংকটকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে খাদ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ সংক্রমণের শুরুতেই লকডাউন প্যানিক বায়িংয়ের ফলে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এখনো সবার স্মৃতিতে স্পষ্ট।

এদিকে চীনের ইয়াংজি নদীর অববাহিকায় ভয়াবহ বন্যায় বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য কৃষক তাদের ফসল ঘরে তোলার আগেই বন্যার পানিতে তা নষ্ট হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারী এরই মধ্যে চীনের অর্থনীতিকে বেশ দুর্বল করে ফেলেছে। তার ওপর ফসলের বন্যাজনিত ক্ষতি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির জন্য বড় আঘাত। অবস্থায় খাদ্যের অপচয় যাতে না হয়, সেজন্য রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম।

জনপ্রিয় লাইভস্ট্রিমিং প্লাটফর্ম দুয়িন কুয়াইশো জানিয়েছে, যেসব মানুষ অনলাইনে গলা পর্যন্ত খাওয়ার ভিডিও শেয়ার করছে, তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হবে। বিপুল পরিমাণ খাবার গ্রহণ তা অনলাইনে দর্শকদের সঙ্গে শেয়ার করার ট্রেন্ডকে বলা হয় মুকবাং

তবে অনেকেই আছেন, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খাদ্যের অপচয় রোধে গৃহীত উদ্যোগের সফলতা নিয়ে নিজেদের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। একজন ওয়েইবোতে লেখেন, সবার আগে আমাদেরকে আমাদের সংস্কৃতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ আমরা সবসময়ই দুজনের জন্য একটি পদ অর্ডার করাকে লজ্জাজনক বলে মনে করি। আরেকজন লেখেন, এটা নিশ্চিত পাগলামির সমতুল্য। এর মানে কি ভবিষ্যতে বাথরুমে গিয়ে আমাকে অর্ধেক টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে হবে?

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন