ইয়ুথ পলিসি ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা

বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে জানতে হবে বিনিয়োগকারী কী চায়

তরুণ প্রজন্মের নীতি গবেষণামূলক প্লাটফর্ম ‘ইয়ুথ পলিসি ফোরাম’ (ওয়াইপিএফ) আয়োজন করেছে ‘রি-থিংকিং এফডিআই: ফর দ্য মেনি’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনার সিরিজ। এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব - 'হোয়াট ইনভেস্টরস ওয়ান্ট’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ১৭ জুলাই। 

এ পর্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রূপালী চৌধুরী, প্রেসিডেন্ট, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, ইয়াসির আযমান, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, গ্রামীনফোন লিমিটেড। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন অর্থনীতিবিদ ডক্টর আখতার মাহমুদ।

আলোচনার শুরুতেই ইয়ুথ পলিসি ফোরামের পক্ষ থেকে গবেষণা লব্ধ বিভিন্ন বিষয় আলোকপাত করে প্রেজেন্টেশন তুলে ধরা হয়। 

তাতে বলা হয়, বিনিয়োগকারীরা স্বাগতিক দেশের কাছে মূলত যে সকল সহায়তা আশা করে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সামষ্টিক অর্থনৈতিক উপাদানসমূহ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিনিয়োগকারীরা স্বাগতিক দেশের সামগ্রিক সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতি কামনা করে। সরকার পরিবর্তনের পরেও নির্দিষ্ট পলিসির ধারাবাহিকতা খুবই জরুরি বলে তারা মনে করে।

বক্তারা বলেন, উক্ত ভূ-রাজনৈতিক কাঠামোতে বিনিয়োগ বান্ধব নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালার উপস্থিতি প্রয়োজন। আমাদের দেশে যদিও বিনিয়োগ সহায়ক পলিসি আছে কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন বেশ অপ্রতুল। তাছাড়া,  বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের হার ও এর স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে, আইনগত কাঠামোর স্বচ্ছতা ও বিনিয়োগ সহায়ক আইন প্রণয়ন বিনিয়োগকারীদের অন্যতম চাহিদা।

সেমিনারের সঞ্চালক ডক্টর আখতার মাহমুদের মতে, শুধুমাত্র পলিসির উপস্থিতি নয়, তার বাস্তবায়নও বিনিয়োগকারীদের ফরেন ইনভেস্টমেন্টে উৎসাহিত করে।

রূপালী চৌধুরী তার প্রতিষ্ঠান এফআইসিসিআই-এর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, এটি হলো সকল ফরেন ইনভেস্টমেন্টের একটি প্রতিমূর্তি যা কিনা জাতীয় রাজস্ব এর এক-তৃতীয়াংশ প্রদান করে থাকে।

আখতার মাহমুদের পর্যবেক্ষণের সাথে যোগ করে বলেন, প্রথম যখন উনারা এফডিআই নিয়ে কথা বলেন তখন নানা ভিন্নমত ও প্রতিকূলতা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে বিদেশী বিনিয়োগের গুরুত্ব সকলে উপলব্ধি করতে থাকে। 

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার চেয়ে পলিসির ধারাবাহিকতাকে অধিক গুরুতর মনে করে থাকে। রূপালী চৌধুরী বিশ্বাস করেন, আমাদের একটি কর্মঠ জনগোষ্ঠী আছে; যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মদক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করা সম্ভব। তার মতে- পলিসি তৈরির সময় সরকারের উচিত বিনিয়োগকারীদের চাহিদাগুলো মাথায় রাখা। বিভিন্ন সেক্টরের জন্য সরকারের একটি কেন্দ্রীয় কাঠামো থাকাও প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। 

আখতার মাহমুদ যোগ করেন, বিদেশী বিনিয়োগ বিদ্যমান এমন কোম্পানিগুলোতে ব্যবসায়িক অনুশীলন ও দক্ষতা দেশীয় কোম্পানিগুলোর চেয়ে অনেক উন্নত। তিনি প্রশ্ন করেন যে, এর ফলে কি কোনো বাড়তি প্রভাব লক্ষ্য করা যায় কি না। উত্তরে ইয়াসির আযমান বলেন, চাকরিক্ষেত্রে ও গুনগত ব্যবসাবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এফডিআইয়ের বাড়তি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

তিনি বাংলাদেশে ফরেন ইনভেস্টমেন্টের ঊর্ধগামীতার চিত্রে গ্রামীণফোনকে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, যখন একটি বিদেশী কোম্পানি বা বিনিয়োগকারী দেশে আসে তখন বহু নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীয় ধারণা নিয়ে আসে। এর প্রভাবে অনেক স্বদেশী বিনিয়োগও সৃষ্টি হয়। 

যেমন গ্রামীনফোনের আগমনের পর বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিস ও ক্ষুদ্র পরিসরে মোবাইল শিল্পের উদ্ভাবন ঘটে। নানা প্রতিকূলতা থাকলেও এগুলো দীর্ঘমেয়াদী সুফল নিয়ে এসেছে।

তার মতে, আমাদের শ্রমশক্তিকে অদক্ষ বা ‘লো-কস্ট লেবার’ হিসেবে চিহ্নিতকরণ বন্ধ করতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আমাদের কৃষি, গার্মেন্টস, মৎস্যসহ সকল প্রকল্পে গুরুত্ব দিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, এফডিআই প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকারি প্রক্রিয়াগুলো ডিজিটাল করা যেতে পারে।

রূপালী চৌধুরীর মতে, এফডিআইয়ের পাশাপাশি দেশীয় অবকাঠামো তৈরি করা খুবই জরুরি। চীন বিদেশী বিনিয়োগ থেকে অনেক উপকৃত হয়েছে কিন্তু এখন তারা দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ডাটা ব্যাংক তৈরি করা উচিত;  যার মাধ্যমে এরকম মহামারী দুর্যোগের সময় তাদের প্রণোদনা প্রদান করা সম্ভব হবে।

উপরোক্ত পরামর্শ ও সুপারিশের মধ্যে আলোচনার ইতি টানা হয়। আলোচকদের আলাপচারিতার মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগ সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে গ্রাহ্য করলে- ভবিষ্যতের বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠবে বলে উপস্থিত সকলের বিশ্বাস। 

আগামী পর্বে নতুন অতিথিদের  অংশগ্রহণে  ওয়াইপিএফ আয়োজিত এফডিআই সিরিজের নতুন আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী শুক্রবার, ২৪ জুলাই। আলোচনাটি হবে - বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহে সরকারি পদক্ষেপ ও ভূমিকা শিরোনামে। 

উল্লেখ্য, এই সিরিজের সকল ওয়েবিনার ওয়াইপিএফের ফেসবুক পেজ- Youth Policy Forum  ও তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হবে। পুরো সিরিজের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে দৈনিক বণিক বার্তা।

নওশিন নূর, সদস্য, ওয়াইপিএফ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন