তৈরি পোশাক

রফতানি কার্যক্রম যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়

ছবি : বণিক বার্তা

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পণ্য রফতানি অন্যতম ভূমিকা রাখে। দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে পাঁচটি পণ্য থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছর পাঁচটি পণ্য থেকে এসেছে মোট রফতানি আয়ের ৯১ দশমিক ৯১ শতাংশ। পণ্যগুলো হচ্ছে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আবার এ শীর্ষ পাঁচ পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাকের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে। দেশের অর্থনীতিতে রফতানি খাতের ভূমিকা অন্যতম। রফতানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় সে রকম কোনো কাজ করা উচিত নয়। কেননা তাতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে বড় ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান। রয়েছে ডলার সংকট। এসব কারণে দেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংসতায় দেশের পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অর্থনীতি আরো কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারিসহ সারা দেশে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে শতভাগ অনলাইননির্ভর রফতানি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয়। জাহাজে ওঠার আগেই আটকা পড়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিকারক অনেক প্রতিষ্ঠানের চালান। আবার ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রফতানি চালান আটকে পড়ার ঘটনাও জানানো সম্ভব হয়নি। চালান জাহাজীকরণ করতে না পারায় রফতানি পণ্যবাহী জাহাজের পণ্য না নিয়েই চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ফলে রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। এ খাতের ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য খাত গড়ে উঠেছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি থেকে দেশকে বিচ্ছিন্ন রাখার অর্থ রফতানি খাতসহ অন্যান্য খাতকে হুমকিতে ফেলা। ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করার আগে সেসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া দরকার। দেশের রফতানি কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সরকারকে মনোযোগ দেয়া দরকার। 

দেশের তৈরি পোশাক পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম সুইডিশ কোম্পানি এইচঅ্যান্ডএম। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যের পোশাক বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে। কোম্পানিটির ক্রয়াদেশে প্রস্তুত করা ২০ কোটি ডলার মূল্যের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে পড়ে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে সেগুলো হ্যান্ডওভার করা যায়নি। দেশে কারফিউ বিদ্যমান থাকলেও যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু থাকত তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্য রফতানিতে কোনো বাধার মুখোমুখি হতে হতো না। এতে রফতানি কার্যক্রম সচল থাকত। 

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের চলমান সংকট মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও ভার্চুয়াল জগৎকে লকডাউন করেছে। সহিংসতা ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব করোনা মহামারীর পরিণতির চেয়ে বেশি হবে। কারণ মহামারীতে মানুষের ব্যবসা সচল ছিল। এছাড়া মহামারীর সময় অনলাইনে পেমেন্ট করা যেত। দেশে সব ধরনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় গত কয়েক দিনে প্রতিদিন দেশের প্রায় ১০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। দেশ অনেক রফতানি আদেশ হারাতে পারে। 

কারখানা বন্ধ থাকায় পোশাক খাতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যদিও এ অস্থিরতার মধ্যে পোশাক কারখানাগুলো বুধবার পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে। এ মুহূর্তে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রফতানি চালান পাঠানো। আশার খবর হলো, ব্রডব্যান্ডসেবা চালুর হওয়ায় বন্দরের কার্যক্রম শুরুর পর আমদানি ও রফতানি কনটেইনার শিপমেন্টের গতি বেড়েছে।

এদিকে কয়েক দিনের সংকটে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় কারখানাগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়েছে। সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে কোটা সংস্কার সমস্যার সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিত তাহলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। চলমান অস্থিরতার মধ্যে তিনদিনের সাধারণ ছুটির পর বুধবার সীমিত পরিসরে ব্যাংক খুলেছে। এতে গ্রাহক টাকা উত্তোলন, রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারছেন। 

এসব ঘটনা বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা কমাবে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী ছিল। এ ধাক্কা কতটা প্রবল হবে এবং কতদিন তার প্রভাব থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আশা করি, ভবিষ্যতে রফতানি কার্যক্রম যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে সরকার গুরুত্ব দেবে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকার আরো সচেষ্ট হবে। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন