গান শুনে শ্রোতারা মন্তব্য করলে শিল্পীদের জন্য ভালো হয়

শিল্পী এলিটা করিম গানে হাতেখড়ি নিয়েছিলেন মায়ের কাছে। দেশের সংগীতজগতে তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় দুই দশক। একসময় কাজ শুরু করেছিলেন ব্ল্যাক ব্যান্ডের সঙ্গে। পরে নিজে তৈরি করেছিলেন ব্যান্ড রাগা তিনি গেয়েছেন নানা মাধ্যমের জন্য। দেশের এই জনপ্রিয় তরুণ সংগীতশিল্পী গানের পাশাপশি সাংবাদিকতায়ও তার দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। গান সাংবাদিকতা প্রায় একসঙ্গেই শুরু করেছিলেন, আলাপচারিতায় জানিয়েছেন টকিজকে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন রাইসা জান্নাত

কেমন আছেন? এখনকার ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই।

ভালো আছি। বাসায় থেকেই অফিসের কাজ করছি। ছোট ছোট কনটেন্ট আর গানের কাজও করছি। এসব নিয়েই ব্যস্ত আছি।

লকডাউনে আপনি তো অনেকগুলো গান করেছেন...

বেশির ভাগ গানই ছিল করোনা নিয়ে। কভিড-১৯কে কীভাবে সবাই মিলে মোকাবেলা করা যায়। আমি এগুলোকে কনটেন্ট বলতেই পছন্দ করব। কারণ গানগুলো আমরা কয়েকজন মিলে করেছি। গ্রুপ করে গাওয়া। আমার কাছে সম্প্রতি আরেকটি কাজ এসেছে। পুলিশরা যেভাবে করোনার সময়টায় কাজ করে যাচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন রকম একটি বিষয় নিয়ে। ধরনের অনেক গানের কাজ আসছে। এগুলোই বেশি করছি।


আসন্ন ঈদ ঘিরে নতুন কোনো গানের পরিকল্পনা আছে?

এখনো পর্যন্ত কোনো কিছু চিন্তা করিনি।

গান সাংবাদিকতাদুটি দিকই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে?

আমার একটা টিম আছে। আমরা প্রতিদিন অনলাইনে কাজ করছি। সমসাময়িক সংবাদগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতিদিন দেয়ার চেষ্টা করছি। আমি এমনিতেও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে লেখালেখি করি। নারী অধিকার, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে লেখালেখি করেছি। এখন অবশ্য আমার লেখা অনেক কমে গেছে। টিম কী করছে, ঠিকমতো প্রতিদিনের সংবাদগুলো যাচ্ছে কিনাএসব দেখাশোনার মধ্য দিয়ে ব্যস্ত থাকছি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবকিছু সমানতালে চালিয়ে যাওয়া একটু কঠিন। আমাদের বাইরে যেতে হয়। আবার ট্রাফিক জ্যাম অতিক্রম করে অফিস করতে হয়। আমার কাছে এগুলো কষ্টকর লাগত সবসময়। কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে এখন মনে হচ্ছে বাসায় বসে দুটি ক্ষেত্রেই মোটামুটি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছি।

আপনার গানের হাতেখড়ি কীভাবে? গানের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করার আগ্রহটা কখন থেকে কাজ করেছিল?

আমার মা। আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। আমি যা কিছু শিখেছি সব আম্মুর থেকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে পেশাদারিত্বের সঙ্গে গান করছি। আর ডেইলি স্টারে সাংবাদিকতার প্রায় ১৭ বছর হয়ে গেছে। যখন কাজ শুরু করি তখন আমার বয়স সম্ভবত ১৯ হবে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিলাম তখন। সবকিছুই আসলে একসঙ্গে করা।

করোনার প্রভাবে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে বড় কী পরিবর্তন লক্ষ করলেন?

অনেকে চাকরি হারাচ্ছেন। কীভাবে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিও রকম একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে গান করে যে খুব বেশি উপার্জন করা সম্ভব তা কিন্তু নয়। গানের পাশাপাশি সবাইকে অন্য কোনো পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। আমি সাংবাদিকতা করছি। অনেকে হয়তো গান শেখাচ্ছেন। টেলিভিশনে উপস্থাপনা করছেন। আবার কেউ হয়তো ছোট ছোট উদ্যোগ নিচ্ছেন। গানটাকে আসলে কেউই আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে নিতে পারছে না। কিন্তু দেশে অনেক শিল্পীই আছেন যারা শো করেন। সেখান থেকে ভালো আয় করেন। আমাদের এখানে তো রয়্যালটির ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এখন শো বন্ধ থাকছে। আবার যারা বাদ্যযন্ত্রী তারা তো বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে গিয়েছেন। তাদের আয়ের কোনো উৎস নেই। এদিক থেকে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে।

করোনার সময় গানের বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও কি একটা পরিবর্তন আসেনি?

অবশ্যই। গত দু-তিন মাসে আমি নিজেও করোনা-বিষয়ক ১০-১২টা গান করেছি। একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটে আমরা সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি। এটা কবিতা, গল্প বা নাটক যে মাধ্যমেই হোক না কেন।


আপনি নিজে কখনো গান লিখেছেন?

গানের লিরিকস লেখার অনেক শখ আমার। কিন্তু আমার ভাষাজ্ঞানের গভীরতা অত ভালো না। গান লেখার মতো নয়। তবে আমি গান লিখেছি। স্বাধীন আমি শিরোনামের একটি গান। সুর করেছিলেন রোমেল আলী। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলাম আমি নিজেই। গান নামে ভালো একটা অ্যাপ আছে। সেখানে গানটি রয়েছে। আমার লেখা সুরে সেই তো পূর্ণিমার রাতে শিরোনামের আরেকটি গান আছে। গানটি আমার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম চলো উৎসবে থেকে প্রকাশ পেয়েছিল। অ্যালবামটি ২০১৬ সালে ইয়ন্ডার (yonder) অ্যাপে মুক্তি পায়। গানটি এখন কোনো অ্যাপে পাওয়া যাবে না। ইচ্ছা আছে শিগগিরই একটা অ্যানিমেটেড ভিডিও তৈরি করে গানটি ছাড়ার।

শ্রোতা পাঠকদের জন্য আপনার কোনো বার্তা?

প্রথমত আমাদের যত গান আছে সেগুলো শুনে যদি শ্রোতারা ভালো-মন্দ মন্তব্য করেন তাহলে আমাদের শিল্পীদের জন্য ভালো হয়। দ্বিতীয়ত কভিড-১৯-এর কারণে এখন দেশের অবস্থা খারাপ। এখনো কোনো কিছু ঠিক হয়নি। আমরা অনেকেই হয়তো ভাবছি করোনার সময় বাইরে বাইরে ঘুরতে পারব। ধারণাটা ভুল। আমাদের বাসার ভেতরে থাকতে হবে। জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া সবার জন্যই আসলে বিপজ্জনক।

 

ছবিগুলো এলিটা করিমের ফেসবুজ পেজ থেকে নেয়া

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন