যুক্তরাজ্য থেকে এক সপ্তাহের সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর ডেটিং নিয়ে মহাসংকটে পড়ে গেলেন কেইটি বোসার্ট।
কভিড-১৯ ছড়ানোর ভয়ে কেউই আর আয়া কিংবা কাজের মেয়ে বাসায় রাখছে না।
এমনকি যে ফুপুর সঙ্গে তিনি একই বাসায় বসবাস করছিলেন, তিনিই বোসার্টকে পরামর্শ দেন, ফেরার পর যেন ১৪ দিনের জন্য সে আইসোলেশনে চলে যায়, এমনকি তাতে বোসার্টের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও।
কিন্তু বোসার্টকে একেবারেই একা থাকতে হতো না: যুক্তরাজ্য সফরের এক মাস আগে ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে দারুণ একটি ছেলের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তার সঙ্গে পাঁচবার ডেটিংয়েও বেড়িয়েছেন।
এখন পর্যন্ত যাদের সঙ্গে ডেটিং করেছেন, এই ছেলেটিকে সবচেয়ে ভালো লেগেছে তার।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যখন ঘরে থাকার নির্দেশ এল, তখন দুজন একত্রে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন।
তারা বাসায় বসেই খাবারের অর্ডার দিতেন, আর মুভি দেখতেন।
জাদুঘর কিংবা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিবর্তে তখন অনেক হাঁটতেন।
তারা সম্পর্কের একটি বন্ধন তৈরি করলেন, যেখানে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত কোনো ভয়ংকর আলোচনাই থাকত না।
আসলে আর কোনো ধরনের পরিস্থিতিতেই তারা এতটা নির্বিঘ্ন সময় কাটাতে পারতেন না।
এতে তাদের মধ্যে অনুভূতিটাও প্রবল হতে থাকে।
কিন্তু ষষ্ঠদিনের মাথায় বোসার্টের ভালোবাসার মানুষের জন্য নির্দেশ আসে, বিদেশে ছয় মাসের পোস্টিংয়ে চাকরিটা পেতে হলে ১৪ দিন সঙ্গনিরোধ কাটাতে হবে! বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বোসার্ট দেখলেন, এই মানুষটিকে বছরের সেরা সময়টুকুর জন্য আর পাচ্ছেন না।
তার কথায়, ‘আমার বয়স ৩৫।
জানি না, আমার অপেক্ষা করা উচিত কিনা, আমি অপেক্ষা করতে পারব কিনা।
আমি আসলে আতঙ্কিত।’ নিউইয়র্কে একাকী বসবাসরত ২৮ বছর বয়সী ফ্যাশন ডিজাইনার এক নারীর কথায় বোসার্টের অনুভূতির প্রতিধ্বনিই যেন শোনা গেল।
তার কথায়, ‘একাকিত্ব নিশ্চিতভাবেই আঘাত করতে শুরু করেছে।’
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সমাজবিজ্ঞানী ডাখার কেল্টনার কাজ করেন মূলত স্পর্শের প্রভাব নিয়ে।
যারা একাকী বসবাস করছেন তাদের ওপর সামাজিক দূরত্বের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
তার কথায়, ‘অন্য যেকোনো সামাজিক শর্তের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হলো স্পর্শ।
এটা মানসিক চাপকে কমিয়ে দেয়।
এটা মানুষকে একে অন্যকে বিশ্বাস করতে শেখায়।
এটা সহযোগিতার সুযোগ করে দেয়।
যখন মানুষ একাকী নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে তখন স্পর্শের বিয়োগান্তক অনুভূতি পায়, সে নিজেকে সমাজের অংশ মনে করে না ও অন্যদের সঙ্গে যুক্তও থাকে না।’
একাকিত্ব একজনের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা যায়, চরম একাকিত্ব ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত এবং এটি এক রকমের প্রদাহের সৃষ্টি করে।
কেল্টনার বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, আপনি যখন একাকিত্ব অনুভব করবেন তখন তা আপনার মধ্যে অবসাদগ্রস্ততা নিয়ে আসবে।
কিন্তু কোয়ারেন্টিনে, এটি চরম পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।’
কেল্টনার মনে করেন, মহামারী বিদায় নিলেও গোটা প্রজন্ম হয়তো প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ডেটিংয়ে নতুন কারো সঙ্গে আলিঙ্গন করতে দুবার ভাববে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা যেভাবে ডেটিং করে এসেছি, করোনাভাইরাস তাকে এরই মধ্যে পাল্টে দিয়েছে, সম্ভবত স্থায়ীভাবেই।
টাইম ম্যাগাজিন