অটোইমিউনজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের ঝুঁকি কি বেশি?

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ যাদের আগে থেকে অন্য কোনো শারীরিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সার্স-কভ- ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের বেশির ভাগই হয় বয়স্ক কিংবা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত। যাদের অটোইমিউনজনিত (এটা এক ধরনের শারীরিক অবস্থা, যা শরীরের স্বাভাবিক অংশে অস্বাভাবিক ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এখানে ইমিউন সিস্টেম মূলত ভুলবশত শরীরকে আক্রমণ করে) সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে রোগ কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেই প্রশ্নও এরই মধ্যে অনেকে তুলেছেন।

লুপাস কিংবা রিউম্যাটয়েড বাতের মতো রোগগুলো মূলত অটোইমিউন পরিস্থিতির অন্তর্ভুক্ত, যেন ইমিউন সিস্টেম সাধারণ বডি টিস্যুকে আঘাত করে। ইমিউন সিস্টেম দ্বারা আক্রমণের হাত থেকে টিস্যুকে বাঁচানোর যে চিকিৎসা তা অনেক সময় শরীরকে সংক্রমণের জন্য আরো অনেক বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। তাই এটা ভাবা অমূলক নয় যে যাদের ইমিউন সিস্টেমে ধরনের সমস্যা রয়েছে, তাদের কভিড-১৯- আক্রান্ত হওয়া এবং তাতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু ব্যাপারটা হয়তো রকম না- হতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইতালিতে কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া হাজার ৩০০ জন রোগীর মাঝে কেবল শতাংশের অটোইমিউন তথা রিউম্যাটয়েড বাত কিংবা লুপাসের মতো সমস্যা দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তির আগে ইমিউন সিস্টেমকে দমন করার জন্য এদের বেশির ভাগকেই চিকিৎসা করা হয়েছে কোর্টিকোস্টেরয়েড কিংবা অন্য ওষুধ দ্বারা। কিন্তু যখন একই হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের সঙ্গে তুলনা করা হয় (যাদের অটোইমিউনজনিত সমস্যা ছিল না) তখন উপসর্গের সময়কাল, হাসপাতালের অবস্থানের সময় কিংবা মৃত্যুর আশঙ্কার দিক থেকে কোনো ধরনের পার্থক্য ছিল না।

নিউইয়র্কে করা একটি ছোট সমীক্ষাতেও অটোইমিউন রিউম্যাটয়েডে আক্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যারা কভিড-১৯-এও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানেও হাসপাতালে ভর্তির হার নিউইয়র্ক সিটির সাধারণ জনসংখ্যার ভর্তির হারের মতোই ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের আরেকটি গবেষণাতে ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেকর্ডকে যাচাই করা হয়। সেখানেও কভিড-১৯- আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন অবস্থার মাঝে তুলনা করা হয়। গবেষণাতেও বাড়তি কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। তবে যাদের কোর্টিকোস্টেরয়েড দ্বারা চিকিৎসা করা হয়েছে, তাদের কভিড-১৯ সংক্রমণ গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে জানা গেছে।

তিনটি গবেষণাতেই দেখা গেছে, বয়স্ক লোকেদের কভিড-১৯- আক্রান্ত হওয়া কিংবা মারা যাওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি সামগ্রিক জনসংখ্যার জন্যই সত্য। এছাড়া দুটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের অন্যান্য সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতাজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে বেশি। এটিও সাধারণ মানুষের জন্য একইরকম থাকে। তবে অটোইমিউনজনিত সমস্যায় থাকা রোগীরা, যারা ইমিউনোপ্রোসিভ থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের কঠোরভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধী ব্যবস্থাগুলো মেনে চলা উচিত, যেমন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা এবং নিয়মিত হাত ধোয়া অন্তর্ভুক্ত। ব্যবস্থাগুলো ইমিউনোপ্রেস জনগণের মাঝে প্রত্যাশার চেয়ে অধিক ভালো ফল এনে দিতে পারে। তবে ডাক্তাররা অটোইমিউনজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের মাঝে বাড়তি কোনো ঝুঁকি লক্ষ্য করেননি।

নিউইয়র্ক টাইমস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন