অভিজ্ঞতা বিনিময়

অংকে বন্দি জীবনকে সহজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে করোনা

কুতুবউদ্দিন আহমেদ

আমি সৌভাগ্যবান মানুষ।

জীবনে অসংখ্য ভালো মানুষ বন্ধুর দেখা পেয়েছি। নানা চড়াই-উতরাইয়ে অসংখ্য মানুষকে পাশে পেয়েছি। সজ্ঞানে কোনোদিন কারো ক্ষতির চেষ্টা করিনি। নিজের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেছি। জীবনভর পরিশ্রম করেছি। আজও করছি। আমি পারিবারিক মানুষ। বিশ্বাস করি পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা এবং পরিবারের সমর্থন হচ্ছে সাফল্যের আসল মন্ত্র।

করোনা আক্রান্ত হয়ে ১২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। ওই সময়ে পরিচিত-অপরিচিত শত শত মানুষের এসএমএস, মেইল, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পেয়েছি। দোয়া ভালোবাসা ভরা সেসব বার্তা পড়ে আমার চোখ ভিজে যেত। আল্লাহর অশেষ রহমত সবার প্রার্থনায় এখন করোনামুক্ত। আশা করছি আগামী সপ্তাহে কাজে ফিরব। যদিও লড়াইটা সহজ ছিল না। কারণ ৪০ বছর আমার অ্যাজমা।

২১ মে জানতে পারি আমি করোনা আক্রান্ত। খবরের জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। শুরুতে হালকা জ্বর খাবারে অরুচি ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ ছিল না। পরেও অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। এমনিতে মানসিক স্বাস্থ্যগতভাবে ভালো ছিলাম। কিন্তু ভাইরাসটি যেকোনো মুহূর্তে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই ভাবনায় আমার সামনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াল অক্সিজেন আইসিইউ সুবিধাসংবলিত একটি হাসপাতাল।

ওই সময়ে কোনো হাসাপাতালে জায়গা নেই। সরকারি-বেসরকারি সব জায়গায় একই অবস্থা। রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রোগী মারা যাওয়ার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। অন্যদিকে আকাশ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিদেশেও চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ নেই। একটা দমবন্ধ অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কে আজাদ ভাই স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দিলেন। তিনিও করোনা আক্রান্ত ছিলেন এবং ওখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তার পরামর্শেই স্কয়ারে ভর্তি হলাম।

তখনো পর্যন্ত স্কয়ারে করোনার চিকিৎসায় একটি মাত্র ওয়ার্ড চালু হয়েছে। অনেক রোগী। কমন বাথরুম। তবে পরিবেশ ভালো। চিকিৎসক, সেবিকা সবাই আন্তরিক। কিন্তু হাসপাতাল তো হাসপাতালই। অসুস্থ মানুষদের আবাস। কার ভালো লাগে হাসপাতালে থাকতে! লেখাটি মূলত হাসপাতালে থাকাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা সম্পর্কিত।

হাসপাতালের সময়টা আমার জন্য বিরাট শিক্ষণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে। একা পরিবার-পরিজনহীন। প্রিয়জনের স্পর্শ নেই, ভিজিটর নেই। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া কঠিন। কিন্তু উপায় কী। ফলে ওই সময়ে নিজেকে নতুন করে চেনাজানার কাজে লাগিয়েছি। জীবনকে বুঝতে চেষ্টা করেছি নতুন করে। পেছনে ফিরে দেখেছি কোথায় কী ভুল করেছি? আর সামনে তাকিয়ে ভবিষ্যেক পড়তে চেষ্টা করেছি।

যতটা সম্ভব নিজেকে সক্রিয় রেখেছি। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, এসএমএসের জবাব দেয়া, ওয়ার্ডের মধ্যে হালকা হাঁটাচলা করা, অন্য রোগীদের সঙ্গে সামান্য গল্পগুজব এবং দীর্ঘ প্রার্থনায় সময় কেটেছে আমার। সময়ে নিজের সঙ্গে প্রচুর কথা বলতাম। করোনা নিয়ে না ভেবে নিজেকে সময় দিয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে জীবনের বড় অংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করব। যদিও আমি আগে থেকেই অনেকগুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। নিয়ে একটা পরিকল্পনাও করেছি। সবকিছু চূড়ান্ত হলে পরিকল্পনাটা প্রকাশ করব।

আমি চাইছি বেশিসংখ্যক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে। জানি, সমাজের প্রায় সবাই সাধ্যমতো গরিব-অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর পরও যারা ধনী বিত্তবান তারা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এলে অনেক বড় কাজ করা সহজ হবে। মহামারীর কারণে কোটি মানুষ জীবিকা হারিয়েছে। দরিদ্রদের সংখ্যা হঠাৎই বেড়ে গেছে। মানুষগুলোর কথা ভেবে মন খারাপ হয়েছে। অবস্থায় আমি শেলটেক-এনভয়ের অধীনস্থ সব প্রতিষ্ঠান, কর্মী আমার পরিবারের সুরক্ষায় আল্লাহর সাহায্য চেয়েছি।

করোনায় আক্রান্ত সবার উপসর্গ এক রকম নয়। শরীরব্যথা, গলাব্যথা, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গের রোগী আমি দেখেছি। অনেকের আবার উপসর্গের সব বিদ্যমান। তবে যার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যত ভালো, তার কষ্ট তত কম। আমার মনে হয়, করোনায় শারীরিক কষ্টের চেয়েও বেদনার হচ্ছে আইসোলেশন বা একা থাকা। এর চেয়ে কষ্টের কিছু হয় না। আরেকটা হচ্ছে এনজাইটি বা উদ্বেগ। সময়টায় দুর্বলতা গ্রাস করতে থাকে শরীর মনে। শরীরের ভেতরে এমন সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটতে থাকে যা উপলব্ধি ছাড়া বর্ণনা করা কঠিন।

করোনা আসার পর থেকে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, যা স্বাভাবিক যৌক্তিক। মানছি আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু আমেরিকা ব্যর্থ হলো কেন? ইতালি, স্পেন বা ব্রিটেন? তাদের ক্ষেত্রে যুক্তি কী? আমার মনে হয়েছে, যুগ যুগ ধরে বিশ্বনেতারা বা রাষ্ট্রগুলো চিকিৎসা নিয়ে যত ভেবেছে, জনস্বাস্থ্য নিয়ে ততটা ভাবেনি। তারা শিল্পায়ন আর প্রবৃদ্ধির হিসাব কষেছে। পরিবেশ নিয়ে ভাবেনি। তাছাড়া অদৃশ্য এক ভাইরাস বিশ্বকে তাড়া করবেএমন দিনের কথাও কেউ কখনো ভাবেনি। ফলে ওলটপালট হয়ে গেছে সব হিসাবনিকাশ। উন্নত-অনুন্নত সব দেশকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে করোনা।

আমাদের দুর্বলতা আছে। অপচয় আছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনার ঘাটতি আছে। এর মধ্যেও চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, নার্স সবাই সেরা সেবা দিতে চেষ্টা করছেন। আস্তে আস্তে সরকারি-বেসরকারি সেবার পরিধি বাড়ছে। যদিও তা যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের একটি। এখানে ব্যবস্থাপনা সহজ নয়, বরং খুব কঠিন। এর মধ্যেও স্মার্ট ব্যবস্থাপনা দিয়ে বিদ্যমান সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে আরো বেশিসংখ্যক মানুষকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।

ভাইরাসটি যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে একসময় সবাই আক্রান্ত হবে। আক্রান্ত হলেও সবার হাসপাতাল প্রয়োজন হবে না। যাদের লাগবে, তারা যেন ন্যূনতম সেবাটুকু পায়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের। পাশাপাশি করোনার বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে দেশব্যাপী আগ্রাসী প্রচারণা দরকার। সার্বিক সুরক্ষা কৌশল নিয়ে আগ্রাসী ইতিবাচক প্রচারে মানুষ সচেতন হবে। এতে অনেক জীবন রক্ষা পাবে এবং হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। অন্যদিকে ফেসবুক ডাক্তারে বদলে মানুষ যেন প্রকৃত চিকিৎসকের কথা মেনে চলে, সে বিষয়েও প্রচারণা দরকার। ফেসবুককেন্দ্রিক টোটকা ডাক্তারি বিপদের কারণ হতে পারে। 

মুহূর্তে দেশের স্বাস্থ্য খাত সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেরই মনোযোগ দাবি করছে। এখন জরুরি পরিকল্পনা গ্রহণের সময়, যা হবে স্বল্প-মধ্য দীর্ঘমেয়াদি। আমার অক্সিজেন লাগেনি। কিন্তু বহু মানুষের অক্সিজেন, আইসিইউ প্রয়োজন। হাসপাতালে থাকতেই খবরে দেখেছি চিকিৎসা না-পাওয়া মানুষের হাহাকার। স্বজন হারানো মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়েছে বাংলাদেশ। শুনেছি সরকার জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন, আইসোলেশন ভেন্টিলেশন সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো যত তাড়াতাড়ি করা যাবে ততই মঙ্গল। পাশাপাশি কভিড-১৯-এর চিকিৎসায় সারা দেশে হাসপাতালের সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার। কারণ আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

আমার বিশ্বাস, করোনা-পরবর্তী সময়ে দুনিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশও এর অংশীদার হবে। কেননা সংকট থেকেই নতুন যাত্রা শুরু হয়। তবে আমাদের দেশে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো দরকার এবং দ্রুততম সময়ে করোনা শনাক্তের উদ্যোগ নেয়া উচিত। শুনেছি পৃথিবীর অনেক দেশে মাত্র ১৫ মিনিট বা আধা ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষার ফল জানা যাচ্ছে। যদি সত্যি তেমন কোনো প্রযুক্তি থেকে থাকে, তবে তা আমাদেরও দরকার। মোট কথা, করোনা পরীক্ষার সুবিধা চিকিৎসাকে মানুষের আয়ত্তে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

করোনার টিকা আবিষ্কার না হলেও বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, বছর বা আগামী বছরের কোনো এক সময়ে টিকা পাবে বিশ্ব। পৃথিবীর বহু দেশে নিয়ে গবেষণা চলছে। অনেক জায়গায় ট্রায়ালও চলছে। এজন্য বহু দেশ টিকার আগাম বুকিং দিয়ে রাখছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমাদেরও এখন থেকে চেষ্টা চালানো উচিত যেন বিশ্ব কোনো টিকা পেলে বাংলাদেশও তার থেকে একটা অংশ পায়।

যতদিন টিকা আবিষ্কার না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের করোনার সঙ্গে বসবাসের কৌশল শিখতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে জিততে যে সময় প্রয়োজন, সেটুকু দিতে হবে। মানুষ করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হবেই, ইনশাআল্লাহ। এখন মাটি কামড়ে টিকে থাকার সময়। কঠিন এই সময় ঠাণ্ডা মাথায় পার করতে হবে। অন্তত আগামী ছয় মাস টিকে থাকার পরিকল্পনা করতে হবে। দরকার হলে বেতন কমাতে হবে, খরচ কমাতে হবে। কিন্তু টিকে থাকতে হবে। এজন্য যে যে কৌশল প্রয়োজন, তা- নিতে হবে। এখন টিকে থাকতে পারলে সেটাই হবে বড় বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যতের লাভ।

এখন পর্যন্ত আমরা কোনো কর্মী ছাঁটাই করিনি। বেতন বন্ধ হয়নি। কয়েক মাসের জন্য শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ড স্থগিত রেখেছি। তবে আমরা পুরো প্রতিষ্ঠান কাঠামো পর্যালোচনা করছি। খরচ কমাতে প্রতিষ্ঠানের ওপরের দিকে কিছুটা সমন্বয় করতে হতে পারে। এটা সাময়িক। কিন্তু নিচের দিকে হাত দেব না, নিশ্চিত।

প্রতিটি সংকটই নতুন সম্ভাবনা সুযোগ নিয়ে আসে। করোনা আমাদের আপত্কালীন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রতি নজর দিতে শিখিয়েছে। শুধু ব্যবসা নয়, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের কথা ভাবতে শেখাচ্ছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, মানবিকতার বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ দিয়েছে। পুঁজি মানে শুধু ভোগ বা মুনাফা নয়, বরং সুষম বণ্টন এবং সম্পদ পুনর্বিন্যাসের বিষয়ও বটে। করোনা না এলে উপলব্ধি কি হতো? করোনা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন, প্রবৃদ্ধির অংকে বন্দি জীবনকে সহজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। দেশ মধ্যম আয়ের হলেই হবে না, দেশের মানুষকেও একই মানে টেনে তুলতে হবে। সমাজের গভীরে তাকাতে হবে। বৈষম্য কমাতে হবে।

উন্নত বিশ্ব অনেকের জন্য স্বপ্নের। মনে হয় সেখানে সুখ আর সুখ। অঢেল অর্থবিত্ত। ঝকমারি জীবন। সবার জন্য সুনিশ্চিত স্বাস্থ্য। অবৈতনিক শিক্ষা। আরো কত কী! অথচ করোনায় মানুষ দেখল অন্য পৃথিবী। বিশ্বনেতাদের ক্ষ্যাপাটে আচরণ, ব্যর্থতা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসহায়ত্ব, মৃত্যু আর অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত প্রদর্শনী। এজন্যই আমাদের নিউজ ফিড ভরে উঠত বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতের বিষণ্ন ছবিতে।

স্মরণ রাখা দরকার শুধু করোনার বিরুদ্ধে জিতলেই হবে না, ক্ষুধার বিরুদ্ধেও জিততে হবে। অনেকেই আর করোনাপূর্ব জীবনে ফিরতে পারবে না। প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতেই এটা হচ্ছে বাস্তবতা। কিন্তু বিশ্বাস হারালে চলবে না। বিশ্বাস থাকলেই কেবল আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। হাসপাতালে থাকতেই পোশাক খাত নিয়ে অনেক কথা শুনছিলাম। এখনো শুনছি। দেশের রফতানির আয়ের ৮০-৮৫ শতাংশ এই একটি খাতের। এত বড় একটা খাত ট্যাকেল করা কঠিন। সবচেয়ে বড় খাত হওয়ায় তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও বেশি। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে খাতের নেতাদের আরো পরিপক্বতা (ম্যাচিউরড) দেখানো উচিত।

পোশাকের ক্ষেত্রে একটা সিজন মিস হয়েছে। আগামী সিজনটা ধরতে পারব কিনা, নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। তবে পরিস্থিতি এমন থাকবে না। ইউরোপ আমেরিকা পোশাক কেনা শুরু করবে। কখন কবে? প্রশ্নের নিশ্চিত কোনো উত্তর নেই। তবে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে এবং ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কাছে প্রতিকূল সময় কোনো ব্যাপার না। প্রশ্ন হচ্ছে, পণ্য উৎপাদন করে বেচব কোথায়? কিনবে কারা?

আমি বিশ্বাস করি, আগামী ছয় মাস টিকতে পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বিশেষত পোশাক খাতে। অন্যান্য খাতের সামনেও সুযোগ আসবে এবং তা মুঠোবন্দি করতে হবে। এখন সুসময়ের জন্য অপেক্ষা এবং স্যাক্রিফাইস করার সময়।

হাসপাতালে থাকতেই জানতে পারি, স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব নাইট অফিসারে জন্য আমাকে বছর মনোনীত করেছে দেশটির রাজা। অসুস্থ অবস্থায় খবরটি আমাকে অসম্ভব মানসিক প্রশান্তি আনন্দ দিয়েছিল। আমি স্পেনের রাজপরিবার, সরকার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। 

পরিশেষে, নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ভয় পেলেন মানে হেরে গেলেন। আমি বলি ইতিবাচক থাকুন। জীবনের পক্ষে থাকুন। দুঃশ্চিন্তা-উদ্বেগ, আপনার আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে পারবে না। ফলে আগামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। টিকে থাকার মূল লড়াইটা আসলে তখন শুরু হবে। সেজন্য শক্তি সঞ্চয় করুন। অর্থ থাকলে জমিয়ে রাখুন, ভবিষ্যতের বিনিয়োগের জন্য।

নিশ্চিত থাকুন ভবিষ্যৎ আমাদের। 

 

কুতুবউদ্দিন আহমেদ: চেয়ারম্যান, এনভয় শেলটেক গ্রুপ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন