মহামারীর নজরদারিতে স্বচ্ছতা প্রয়োজন

গেনেভিয়েভে বেল

দ্য অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ) কভিড-১৯-এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত সাড়া দিতে শুরু করে। আমি এখানে কাজ করি। আমাদের ক্লাসগুলো চলে যায় অনলাইনে এবং আমাদের স্টাফদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমরা সবাই এক ধরনের ডিজিটাল মধ্যস্থতা এবং দূরত্ব রেখে পৃথিবীতে নিজেদের পরিচালিত করি। সেসব ছাত্র, যারা আবাসিক হলে থাকে, তারা এমন একটি দেশে বন্দি হয়ে পড়েছে; যারা নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিমান চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। এটি তাদের জন্য একটি নিয়ত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি। তাদের নিরাপদে রাখা সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল। এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয় পরিচ্ছন্নতার নীতি আরো বাড়িয়ে দিতে হয়। নিয়ম করে প্রতিদিন তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখাও নতুন বাস্তবতার অংশ হয়ে ওঠে।

কঠোরভাবে কন্টাক্ট ট্রেসিং ব্যবহার করে কভিড-১৯-এর বিস্তৃতি কিছুটা ঠেকানো গেছে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান দক্ষিণ কোরিয়ায় এটি বেশি কার্যকর ছিল। এই পদ্ধতি সার্স, মার্স, এইডস ১৯১৮-১৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর সময়ও ব্যবহূত হয়েছিল। যার বর্তমান উদাহরণ হচ্ছে মোবাইল ফোন অ্যাপের ব্যবহার। তবে এটি নজরদারি গোপনীয়তার ব্যাপারে নতুন উদ্বেগ জাগিয়ে তুলেছে। সে সঙ্গে স্বাস্থ্য, সম্প্রদায়ের মঙ্গল এবং ব্যক্তি অধিকারের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিকেও সামনে এনেছে। এমনকি এএনইউতেও আমরা এসব বিষয়ে সমতা বিধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করছি।

সম্ভবত আমরা নতুন ধরনের সামাজিক চুক্তির সঙ্গে সমঝোতা করছি। সেটা আমাদের প্রতিবেশী, সম্প্রদায় সরকারের সঙ্গে। যা কিনা স্বাস্থ্য সংকটের প্রতিক্রিয়ায় প্রযুক্তির ভূমিকা রাখা পর্যন্ত বিস্তৃত। আর নতুন চুক্তির সঙ্গে মধ্যস্থতা করার মাধ্যমে বিদ্যমান তথ্যগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনিবার্যভাবে প্রশ্নের মুখে পড়ে।

আমাদের অনেক কিছু মনঃস্থ করতে হবে। আপনাকে নিয়ে করা কন্টাক্ট ট্রেসিং সম্পর্কে একবার ভাবুন। আপনি কি জানেন গতকাল আপনি কোথায় এবং কার সঙ্গে ছিলেন? আপনি কী করছিলেন? এক সপ্তাহ আগে কী করছিলেন? দুই সপ্তাহ আগে? আপনি কীভাবে পেছনে গিয়ে ট্রেস করবেন? আপনার ক্যালেন্ডার দিয়ে? আপনার ইনবক্স দিয়ে? ক্রেডিট কার্ড রসিদ বা ডিজিটাল ওয়ালেট দিয়ে? ফেসবুক? গুগল ম্যাপ? ট্রানজিট কার্ড? ডেটিং অ্যাপ? চ্যাট অ্যাপ? স্মার্ট ওয়াচ? ক্যামেরা? ফোন? আপনি নিজের স্মৃতিতে বিশ্বাস রাখবেন নাকি অন্যের? আপনার ডিজিটাল ডিভাইস, নিজের ডাটা নাকি অন্যের ডাটার ওপর? আপনি সবকিছু কি পুনর্গঠিত করতে পারবেন?

যদি আপনি পারেন, এর অর্থ আসলে কী? কীভাবে এটি ব্যবহূত হবে, কার দ্বারা, কী জন্য এবং কতদিন ধরে? এটা জেনে আপনার কেমন লাগবে যে দৈনিক সাপ্তাহিক ট্রেসিংয়ে আপনিও আছেন? অথবা এটা জানা যে চলে যাওয়া মুহূর্ত এখন ধরে রাখা হবে, স্থির রাখা হবে এবং ভিন্ন এক গল্প বলার জন্য ব্যবহার করা হবে।

যখন আপনি গত দুই সপ্তাহে আপনার যোগাযোগের ব্যাপারে জানবেন আপনি তা কাকে জানাবেন? আপনার বাচ্চাদের? আপনার সঙ্গীকে? আপনার বাবা-মাকে? কাছের বন্ধুকে? পছন্দের মানুষকে? সেবাদানকারী ব্যক্তিকে? নিয়োগকর্তাকে? শিক্ষককে? ডাক্তারকে? প্রতিবেশীকে? সম্প্রদায়কে? সরকারকে? কেমন অনুভূতি হবে আপনার যখন আপনার জানানোর নিজস্ব কোনো পছন্দও থাকবে না? এমনকি এটা যে প্রকাশিত হয়েছে, সেটাও যদি আপনি জানতে না পারেন?

কন্টাক্ট ট্রেসিং অনেকটা জেলখানায় কয়েদিদের নজরে রাখার মতো। এর আগেও পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। এসব পটভূমির বিপরীতে কন্টাক্ট ট্রেসিং বিষয়ে আমাদের চিন্তাকে পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে এবং আমরা এর নৈতিক শাস্তিমূলক যেসব দিক আছে তা সরিয়ে দিতে পারি। ভবিষ্যতে এগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহারের স্বার্থে, অতীতে এর ব্যবহারের সাংস্কৃতিক কৌশলকে ভেঙে দিতে পারি।

এখানে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে করপোরেশন এবং সরকার এই কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ডাটাগুলো কীভাবে ব্যবহার করবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে। নিশ্চিত প্রশ্নগুলো হচ্ছে কে এই ডাটা ব্যবহার করবে এবং এগুলোর মালিক হবে? ডাটাগুলোতে কর প্রবেশাধিকার থাকবে, সেটি স্বয়ংক্রিয় হবে নাকি কোনো মানুষ তা যাচাই করবে? আপনার শারীরিক পরীক্ষার ফল এবং অ্যান্টিবডির অবস্থা কি অন্য দেশে ভ্রমণের সময় তাদের জানানো হবে? আপনাকে কি সীমান্তে পরীক্ষা করা হবে? এটা ভোলা ঠিক হবে না যে এগুলো ঘটতে পারে একটি বৃহৎ পরিসরে। অনেক দেশ যদিও এখন ডাটা সংগ্রহের পদ্ধতি আরো সুচারুভাবে করার ব্যাপারে কাজ করছে। তবে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনার পাশাপাশি এর গোপনীয়তার দিকও বিবেচনায় রাখতে হবে।

এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন