চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশ থেকে দুই কোটি মণ বা আট লাখ টন ধান কিনবে সরকার। প্রতি মণ ধানের দাম প্রায় ১ হাজার ৪০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের কাছে প্রায় ২ হাজার ৮০ কোটি টাকার ধান বিক্রি করবেন সারা দেশের কৃষক। সরকারের ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজই। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার জন্য খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজটি মূলত খাদ্য অধিদপ্তরই করে থাকে। সরকারি সংগ্রহ কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় অংশ আসে বোরো থেকে। কৃষকদের ন্যায্য দাম দিতে প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ টাকা। গত বোরোর তুলনায় ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা প্রাথমিকভাবে চার লাখ টন বাড়ানো হয়েছে।
ধান কেনায় স্বচ্ছতার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি বেশকিছু জেলায় ধান কাটা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। ধানে কৃষককে মুনাফা দেয়ার জন্য প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান কেনায় কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয়, সেজন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ সচেতন থাকবেন। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের কমিটিকে আরো দক্ষতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সত্যিকারের কৃষক যারা, তারা হাজার টাকার বেশি মণে ধান বিক্রি করতে পারলে বেশ লাভবান হবেন। তারা পরবর্তী সময়ে শস্য আবাদে উৎসাহিত হবেন।
বোরো ধান সংগ্রহের এ লক্ষ্যমাত্রা ও দাম নির্ধারণ করে ২ এপ্রিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ এপ্রিল প্রাথমিকভাবে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ অনুসারে কী পরিমাণ ধান কেনা হবে, সেটি জানিয়ে দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে যে ছয় লাখ টনের বরাদ্দ পাঠানো হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান কেনা হবে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে। এ দুই বিভাগ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ২০৭ টন ধান কেনা হবে। পাশাপাশি রাজশাহী বিভাগ থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ টন, রংপুর বিভাগ থেকে ১ লাখ ২ হাজার ১৬০ টন ধান কেনা হবে। সব মিলিয়ে এ চারটি বিভাগ থেকেই কেনা হবে মোট ধানের প্রায় ৬৪ শতাংশ। এছাড়া খুলনা বিভাগ থেকে ৭৩ হাজার ৩৬৯ টন, চট্টগ্রাম থেকে ৭৫ হাজার ৩৮৭ টন, সিলেট থেকে ৫৪ হাজার ২৭৮ টন ও বরিশাল বিভাগ থেকে ১৬ হাজার ৯৩৩ টন ধান কেনা হবে। প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ টনের নোটিস দিলেও পরবর্তী সময়ে তা আরো দুই লাখ টন বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে এবারে আট লাখ টন বা দুই কোটি মণ ধান কেনা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। ধান কেনা কার্যক্রমে কোনোভাবেই যাকে কৃষক নন এমন ব্যক্তি কিংবা বোরো আবাদ করেননি এমন কৃষক আসতে না পারেন, সে বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধান কেনা বা লটারিতে কোনোভাবেই যেন মধ্যস্বত্বভোগীরা আসতে না পারেন, তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, কৃষকের শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিপণনে সহায়তা করতে হবে। বোরো মৌসুমে সংগ্রহটা ঠিকমতো করতে পারলে আমাদের খাদ্য মজুদকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে পারব। গত আমন মৌসুমের মতো এবারো কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে লটারির মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে। এজন্য গত বোরো মৌসুমের চেয়ে দুই লাখ টন ধান বেশি কেনা হবে।
জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে চার লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে সাড়ে ১৫ লাখ টন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিল খাদ্য অধিদপ্তর। তবে এবার ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য বাড়ানো হয়নি। চলতি মৌসুমের দাম গত মৌসুমের মতো একই ছিল।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষক ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো মৌসুমে ৮ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার টন আতপ ও ৮০ হাজার টন গম সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ২১ লাখ টন ধান-চাল ও গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ২৮ টাকা দরে প্রায় ৭৫ হাজার টন গম কেনা হবে। চাল সংগ্রহ আগামী ৭ মে থেকে সংগ্রহ শুরু হয়ে চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে ১৫ এপ্রিল থেকে গম কেনা শুরু হয়ে চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।
বিভাগ অনুসারে ধান কেনার পরিমাণ
বিভাগ পরিমাণ (টন)
ঢাকা ও ময়মনসিংহ ১,৭৫,২০৭
রাজশাহী ১,০২,৬৬৬
রংপুর ১,০২,১৬০
খুলনা ৭৩,৩৬৯
চট্টগ্রাম ৭৫,৩৮৭
সিলেট ৫৪,২৭৮
বরিশাল ১৬,৯৩৩
সূত্র : খাদ্য অধিদপ্তর