সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে আতিকের ৩৮ প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে ৩৮টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

আতিকুল ইসলাম বলেন, একটি শহরের প্রাণ হচ্ছে পাড়া ও মহল্লাগুলো। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে গেলে প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায় আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। এলাকাভিত্তিক সমস্যা শনাক্ত করে সেগুলোর স্থায়ী সমাধানের মধ্য দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনই নগরীর সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে, যার ফলে নগরীর বাসিন্দারা সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য কেবল বসবাস উপযোগী নগরী গড়া নয়, নগরবাসীর জীবনমানের উন্নতি সাধন করাও। এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে দেয়া নির্বাচনী ইশতেহারের অধিকাংশের কাজই শুরু হয়েছে। মেয়র হিসেবে গত নয় মাসের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর কাঙ্ক্ষিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে আজকের এই ত্রিমুখী ইশতেহার দিচ্ছি।

নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, নগরীর সার্বিক উন্নয়নে আমি কথা দিচ্ছি, আমাকে পুনরায় পূর্ণ মেয়াদে নির্বাচিত করলে লক্ষ্য অর্জনে সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব। সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে ঢাকা শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার সমস্যার সমাধান করে সবার প্রিয় ঢাকা গড়ব, যে ঢাকা আপনাদের সবার প্রাপ্য।

আবার নির্বাচিত হলে রাজধানীর মানুষকে মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে সারা বছর মশক নিধন কার্যক্রম চালাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র প্রার্থী আতিকুল। এজন্য ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াসা, পার্শ্ববর্তী সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি। 

টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাজধানীর অদূরে আমিনবাজারে আরআরএফ (রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটিজ) স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারণ ও জ্বালানিতে রূপান্তরের প্রতিশ্রুতিও এসেছে আতিকুলের নির্বাচনী ইশতেহারে।

তিনি বলেন, ঢাকার আকাশে বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় অনেক বেশি। তাই বায়ুদূষণ মোকাবেলায় উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় মিস্ট ব্লোয়ারসহ ঢাকার রাস্তায় বিদ্যুচ্চালিত বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমার।

নির্বাচনী ইশতেহারে ঢাকার যানজট নিরসন ও গণপরিবহন নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন আতিক। এর মধ্যে রয়েছে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নির্মাণ, যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, নিরাপদ পথচারী পারাপার নিশ্চিত করতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল পুশ বাটন সিগন্যাল স্থাপন, সাইকেল ও মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন (যেখানে সম্ভব), নগর পরিবহন ব্যবস্থায় ডিজিটাল ই-টিকিটিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য গণস্থাপনা ও গণপরিবহন নিশ্চিতকরণ, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ, নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্থানে স্বয়ংক্রিয় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ এবং নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ।

ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়া ঢাকার খালগুলো মশার আবাসস্থল হয়ে ওঠার পাশাপাশি বর্ষায় জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। আবার বিজয়ী হলে জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আতিক।

তিনি জানান, নির্বাচিত হলে মিরপুরে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষা প্রাণীর ক্লিনিক, আধুনিক জবাইখানা, রাজধানীবাসীর জন্য পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবেন। এছাড়া পাড়া উৎসব উদযাপন, বস্তিবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা, ঢাকা দক্ষিণ সিটির বর্ধিত এলাকায় নারীবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, প্রতিটি স্থাপনায় ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষ নির্মাণের কথা রয়েছে নৌকার প্রার্থীর ইশতেহারে।

ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক বসানোর কথা বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে ডিএনসিসির মালিকানাধীন কাঁচাবাজার ও মার্কেটকে আধুনিকায়ন করার কথাও বলেছেন।

তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সেবাকেন্দ্র গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আতিকুল ইসলাম। যেখানে থাকবে হেল্প ডেস্ক, ট্রেনিং সেন্টার, স্টার্টআপ কো-ওয়ার্কিং স্পেস, লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য সুবিধা। বিজয়ী হলে নির্বাচিত সব প্রতিনিধির আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতি বছরই প্রদান করার কথা বলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন