মাছ চাষের জন্য ভুলুয়া নদীর মাঝ বরাবর বাঁধ

পানিপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নোয়াখালী

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় মাছ চাষের জন্য বাঁধ দেয়া হচ্ছে ভুলুয়া নদীর মাঝ বরাবর। এতে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট এবং বর্ষায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতারা বাঁধ দিতে সহায়তা করছেন। তবে দাবি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন অভিযুক্তরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মেঘনার শাখা হাতিয়া নদীর একটি অংশ সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের চর জিয়া উদ্দিনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এটিকে স্থানীয়রা ভুলুয়া নদী বলেই ডাকে। তিন দশক আগেও নদীটি মেঘনার সঙ্গে মিলে প্রবাহিত হতো। তখন লক্ষ্মীপুর-হাতিয়ার অন্যতম নৌরুট হিসেবে ব্যবহূত হতো নদী। তবে কালের বিবর্তনে মেঘনা সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভুলুয়া নদীতেও পানির প্রবাহ কমে আসে। বর্ষা ছাড়া বেশির ভাগ সময় নদীটি ক্ষীণধারায় প্রবাহিত হয়। প্রবাহ কমে এলেও আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য এখনো নদীর ওপর নির্ভরশীল।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে শুকিয়ে যাওয়া ভুলুয়া নদীর মাঝ বরাবর দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ তৈরি করছে স্থানীয় একটি চক্র। তারা বাঁধের মাধ্যমে নদীর গতিপথ সংকীর্ণ করে বাকি অংশে মাছ চাষের পরিকল্পনা করছেন। দুই বছর আগেও একইভাবে নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন বাঁধ ভেঙে দেয়। তবে এবার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতারা কাজে ইন্ধন দিচ্ছেন। কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুই বাসিন্দা বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুম চলায় নদীর পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সুযোগে নদীর মাঝে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। বাঁধের ওপর লাগানো হয়েছে কলা গাছ। এভাবে নদীর জমিতেই মাছের প্রজেক্ট তৈরি করা হচ্ছে।

তারা বলেন, সুবর্ণচরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম নদী। বাঁধ দিলে নদী সরু হবে। একপর্যায়ে পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে। তখন এলাকায় পানির সংকট দেখা দেবে। আবার বর্ষায় পানি প্রবাহিত হতে না পেরে অল্প বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেবে।

তারা আরো বলেন, চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন রায়হান এবং চরবাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. ফয়সালসহ অনেকে বাঁধ দেয়ার কাজে সহায়তা করছেন।

ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জসিম উদ্দিন রায়হান এবং মো. ফয়সাল বাঁধ দেয়ার কাজে সহায়তার কথা অস্বীকার করেন। তারা বণিক বার্তাকে বলেন, নদী দখলের সঙ্গে তারা কোনোভাবেই যুক্ত নন। বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।

জানতে চাইলে নোয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত বাঁধ উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, এরই মধ্যে তিনি সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে নদী দখলের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। দ্রুত বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন