ইরানে ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, নিহত ১৭৬

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইরানের রাজধানী তেহরানে গতকাল দিনের শুরুতে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে উড়োজাহাজটির ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন বলে ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক গোলযোগকে এ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও আল জাজিরা।

ইরানে এমন একসময় এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের মুখে রয়েছে। ফলে এ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

ইরানের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাসেম বিনিয়াজ দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানান, স্থানীয় সময় ভোরে তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উদ্দেশে যাত্রা করে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজ। ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইট পিএস৭৫২ নামের এ উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের কিছু সময় পরই বিধ্বস্ত হয়। এ সময় উড়োজাহাজটির একটি ইঞ্জিনে আগুন ধরতে দেখা যায়। বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি জায়গায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ, ইঞ্জিনের পুড়ে যাওয়া অংশ ও ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে।

ইরানের রেড ক্রিসেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিধ্বস্তের পর উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। এ কারণে কারো পক্ষে বাইরে বের হয়ে আসা সম্ভব হয়নি। ফলে আরোহীদের কারো বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজটিতে নয় ক্রুসহ ১৭৬ জন আরোহী ছিলেন। আরোহীদের অধিকাংশই ইরান ও কানাডার নাগরিক। পরে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটিতে ইরানের ৮২, কানাডার ৬৩, সুইডেনের ১০, আফগানিস্তানের চার, যুক্তরাজ্যের তিন, জার্মানির তিন ও নয় ক্রুসহ ইউক্রেনের ১১ নাগরিক ছিলেন।

দুর্ঘটনার পর পরই তেহরানের ইউক্রেন দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক টুইটার বার্তায় উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকার কথা জানানো হয়। তবে পরবর্তী সময়ে টুইটটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে বোয়িংয়ের কাছ থেকে উড়োজাহাজটি কিনেছিল ইউক্রেন। দুর্ঘটনার পর পরই তেহরান অভিমুখী সব উড়োজাহাজের যাত্রা স্থগিত করেছে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস।

ইরানের পক্ষ থেকেও কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। ইরানিয়ান এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের মুখপাত্র রেজা জাফরজাদেহ জানান, ন্যাশনাল এভিয়েশন বিভাগের একটি তদন্ত দল কাজ শুরু করেছে।

দুর্ঘটনার কারণে ওমান সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদেমার জেলোনস্কি। এক বিবৃতিতে তিনি নিহত যাত্রী ও ক্রুদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে দুর্ঘটনার কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে ইউক্রেনের সবগুলো উড়োজাহাজ নতুন করে পরীক্ষা করা হবে।

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ওলেক্সি হনচারুক উড়োজাহাজে অবস্থানকারী সবার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তাদের মরদেহ আনতে তেহরানে একটি বিশেষ উড়োজাহাজ পাঠানো হবে। 

এমন একসময় এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ইরাকের মাটিতে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানি তারকা জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মৃত্যু ও এর জের ধরে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় ইরানের প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলার ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। উত্তেজনা ছড়িয়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওপর অবৈধভাবে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ মাথায় নিয়ে নিজ দেশে অভিশংসনের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের তালিকায় জো বাইডেনের নাম রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন