ইন্টারনেট ডাটা ও কলরেট বৃদ্ধি

নাভিশ্বাস উঠেছে সীমিত আয়ের ভারতীয়দের

কিরণ আধারের বাড়ি দিল্লির পূর্বাঞ্চলে। পেশায় গৃহিণী। সংসার সামলে অনলাইনে সময় কাটাতে পছন্দ করেন তিনি। বলিউডের জনপ্রিয় গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে দিনের অনেকটা সময় কেটে যায় কিরণের। এজন্য তিনি ৫০০ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) দিয়ে ২ জিবির ইন্টারনেট ডাটা প্যাকেজ  কেনেন। মেয়াদ থাকে ৮৪ দিন। তবে হঠাৎ করেই ইন্টারনেট ব্যয় বেড়ে গেছে কিরণের। এখন একই ডাটা প্যাকেজ কিনতে তাকে বাড়তি ২০০ রুপি গুনতে হচ্ছে।

একই সমস্যায় পড়েছেন হায়দরাবাদের রবিতা শুক্লা। পেশায় গৃহকর্মী এ নারী বাড়িতে কথা বলার জন্য মাসভিত্তিক ৫০ রুপির একটি প্যাকেজ ব্যবহার করেন। বর্তমানে তার এ ব্যয় বেড়ে ৯৮ রুপিতে ঠেকেছে।

শুধু কিরণ কিংবা রবিতা নয়, এ সমস্যায় ভুগছেন অসংখ্য ভারতীয়। বিশেষত সীমিত আয়ের ভারতীয়দের কাছে মোবাইল কলরেট ও ইন্টারনেট ডাটার বাড়তি ব্যয় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ বিষয়টি নিয়ে কোনো মহলেই খুব একটা আলোচনা নেই। রবিতা শুক্লা বলেন, পত্রিকা-টিভিতে সবাই পেঁয়াজের বাড়তি দাম নিয়ে কথা বলতেই ব্যস্ত। এদিকে কলরেট ও ডাটার খরচ বেড়ে যে দ্বিগুণ হয়ে গেল, সেটা নিয়ে যেন কারো মাথাব্যথা নেই!

ক্রমাগত লোকসানের ধাক্কা সামলাতে ভারতীয় অপারেটররা চলতি মাসের শুরু থেকে কলরেট ও মোবাইল ডাটার ট্যারিফ ৪০-৪২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর জের ধরেই কিরণ, রবিতার মাসিক ব্যয়ের হিস্যা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

নৃবিজ্ঞানী পায়েল কাপুর জানান, সীমিত আয়ের ভারতীয়রা স্মার্টফোনে চারটি খাতে ডাটা ব্যবহার করে। অ্যাস্ট্রলজি বা জ্যোতিষ শাস্ত্র, বলিউড, ক্রিকেট এবং ডেভোশন বা পূজা-অর্চনা; যা সংক্ষেপে এবিসিডি নামে পরিচিত। এখন ডাটার দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এ চার খাতে সময় কাটাতে পারছেন না।

এর সত্যতা মিলল গাজিয়াবাদের গৃহিণী রিনা পেশোয়ারের কথায়। প্রতিদিন সন্ধ্যাকালীন পূজা শেষে অনলাইন আরতিতে যুক্ত হন তিনি। এজন্য তাকে ২৪৯ রুপি দিয়ে ইন্টারনেট ডাটা কিনতে হচ্ছে। অথচ আগে ১৬৯ রুপিতেই তিনি সারা মাস এ কাজ করতে পারতেন। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনলাইন আরতিতে যুক্ত হওয়ার সময় কমিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তামিলনাড়ুতে কর্মরত শ্রমিক এমকে সিং বলেন, আমার পরিবার থাকে উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে। তাই আমি ৪৯৫ রুপি দিয়ে একটি টকটাইম ও ইন্টারনেট ডাটার প্যাকেজ কিনে বাড়িতে কথা বলি। অনায়াসে কয়েক মাস চালানো যায় এ প্যাকেজ। এখন ট্যারিফ বাড়ানোয় একই প্যাকেজ কিনতে আমার খরচ বেড়ে ৬৪৭ রুপিতে ঠেকেছে। এ কারণে বাড়িতে কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছি। সীমিত আয় দিয়ে বাড়তি টকটাইম ও ডাটা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

একই সমস্যার কথা বলেছেন উত্তর প্রদেশের ট্রাকচালক কুমার দাস। তিনি বলেন, গাড়ি চালানোর অবসরে মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে সিনেমা দেখি। ক্রিকেট খেলা থাকলে অনলাইনে স্কোর দেখি। গাড়ি চালানোর সময় জিপিএস চেক করতে হয়। মাসের পর মাস বাইরে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়িতে কথা বলতে হয়। এগুলো আমার নিত্যদিনের খরচের অংশ। মাসভিত্তিক ডাটা প্যাকেজ কিনে এ খরচ সামাল দিই। এখন ডাটার দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে। বাধ্য হয়ে বাড়িতে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি। সিনেমা কিংবা খেলা দেখাও বন্ধ।

সীমিত আয়ের মানুষদের এ কষ্ট লাঘব করতে সরকারের প্রতি টেলিকম খাতের জন্য এককালীন সহায়তা প্যাকেজ দাবি করেছে ভারতীয় অপারেটররা।

            টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন