সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে বৈশ্বিক হাব হয়ে উঠছে ভারত

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: ইটি টেলিকম

বিভিন্ন সংকটের কারণে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাত দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদকারীদের কারখানা স্থানান্তরে বাধ্য করেছে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক পর্যায়ে চিপ উৎপাদনের অন্যতম হাব বা কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা অনেকটাই বাস্তবায়নের পথে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ইটি টেলিকম।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত অর্জিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিশারদরা। কেননা বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানি দেশটিতে তাদের কারখানা স্থাপনসহ কার্যক্রম বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে।

গত সপ্তাহেই ভারত সরকার ১ দশমিক ২৬ লাখ কোটি রুপি ব্যয়ে তিনটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে ভারতের উৎপাদন ইকোসিস্টেম আরো বেশি স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।

মেক ইন ইন্ডিয়া স্লোগানকে সামনে রেখে মহামারীর সময় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভারত সরকার প্রডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ স্কিম ঘোষণা করে। এতে চিপ ও ডিসপ্লে ইউনিট উৎপাদনের জন্য ৭৬ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেয়া হয়। ইন্ডিয়া ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসোসিয়েশন (আইইএসএ) ও কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, ২০২৬ সাল নাগাদ ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাজার ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা ২০১৯ সালের ২ হাজার ২৭০ কোটি ডলারের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।

ভারতের ইলেকট্রনিকস, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ ও রেলপথ বিভাগের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খাতে দেশটির বিনিয়োগ পাঁচ গুণ বেড়ে ৭ দশমিক ৫ লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে। এর মাধ্যমে ২০২৮ সাল নাগাদ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচ দেশের একটিতে পরিণত হবে ভারত।

তিনি বলেন, ‘ডিজাইন করার সক্ষমতা থাকলে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতাও তৈরি হবে। একবার ইকোসিস্টেম তৈরি হয়ে গেলে তা সাধারণভাবে অন্যদের আকৃষ্ট করবে। নতুন যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এর মাধ্যমে ডিজাইন, তৈরি, অ্যাসেম্বল, পরীক্ষণ, চিহ্নিতকরণ ও প্যাকেজিংয়ে পরিপূর্ণ সক্ষমতা অর্জন সম্ভব হবে।’

ভারত যে প্রণোদনা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেখানে সেমিকন্ডাক্টর ইকোসিস্টেমের তিনটি দিকই রয়েছে। এগুলো হলো প্যাকেজিং ইউনিট, অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড টেস্টিং প্রজেক্ট এবং চিপ উৎপাদন সক্ষমতা।

সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে বেশকিছু বিষয় জড়িত। তার মধ্যে রয়েছে কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপাদানে জটিল সরবরাহ চেইন। বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে কাঁচামাল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে পুরো খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সম্প্রতি তিনটি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। এর মধ্যে ৯১ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে গুজরাটের ধোলেরাতে কারখানা স্থাপন করবে টাটা ইলেকট্রনিকস সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট ও তাইওয়ানের পাওয়ারচিপ। টাটা সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড টেস্টের সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট আসামে ২৭ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগে কারখানা নির্মাণ করবে। এছাড়া রেনেসাস ইলেকট্রনিকস করপোরেশন ও থাইল্যান্ডের স্টারস মাইক্রোইলেকট্রনিকসের সঙ্গে ৭ হাজার ৬০০ কোটি রুপি বিনিয়োগে গুজরাটে কারখানা নির্মাণ করবে সিজি পাওয়ার। এছাড়া গত বছর এ অঞ্চলে মাইক্রনের বিনিয়োগে আরো একটি সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদনও দেয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন