বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ : ৬ বছরে বিক্রি বেড়ে দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি বছরই দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি আবাসন ও নির্মাণ খাতেও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আর এর সুবাদে দেশের রঙের বাজারে ভালো ব্যবসা করছে বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। বর্তমানে দেশের রঙের বাজারের ৫৫ শতাংশই কোম্পানিটির দখলে। প্রতি বছরই এর বাজার বাড়ছে। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত ছয় বছরে বার্জারের বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ। পাশাপাশি এ সময় কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে ২ দশমিক ২৭ গুণ।

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ হিসাব বছরে বার্জার পেইন্টসের বিক্রি ছিল ৮৭৯ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে এসে যা ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একইভাবে ২০১৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৮৬ কোটি টাকা। এটি সর্বশেষ ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ১৯৫ কোটি টাকা হয়েছে।

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব খন্দকার আবু জাফর সাদিক বণিক বার্তাকে বলেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে গেল বছর কোম্পানির ব্যবসায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে পরিচালন ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে আমরা তা সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। অবশ্য বেশ কয়েক বছর আগে থেকে আমরা ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করছি। আর এতে কোম্পানির মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এদিকে বাজারে নিজেদের অবস্থান রাখতে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়িয়েছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ। গত ছয় বছরে কোম্পানিটির উৎপাদন সক্ষমতা ২ দশমিক ৪৫ গুণ বেড়েছে। সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানিটি দক্ষতার সঙ্গে তা কাজে লাগিয়েছে। কোম্পানিটির তরল রঙ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গড়ে ৮৬ শতাংশ সক্ষমতা কাজে লাগিয়েছে। অ-তরল রঙের ক্ষেত্রে যা ৮৮ শতাংশ।

৩১ মার্চ সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে বার্জার পেইন্টস। এ সময় কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪৪ টাকা ১৩ পয়সা। এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ২০০ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ১০০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয় বার্জার পেইন্টস। সে বছর কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৭৭ টাকা ১০ পয়সা। তার আগে ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ১৭৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের পর আরো ৪২৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ৩৭০ শতাংশ নগদ পেয়েছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের সম্মিলিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ টাকা ১২ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময় যা ছিল ৭ টাকা ৩৯ পয়সা। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৩ টাকা ৭৩ পয়সা বা ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

প্রথম প্রান্তিকে বার্জার পেইন্টসের মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৯৫ কোটি ৯৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় বেড়েছে ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এপ্রিল-জুন মেয়াদে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময় যা ছিল ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বার্জার পেইন্টস শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ১ হাজার ৫১০ টাকা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ১০১ টাকা ২০ পয়সা ও ২ হাজার ১৩০ টাকা।

২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৬২৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৯৫ শতাংশই রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া ২ দশমিক ২২ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ৩২ শতাংশ বিদেশী ও বাকি ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ৩৯ দশমিক ১৬, অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ৩৩ দশমিক ৯৪।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন