সংস্কার

ব্যাংক খাত সংস্কারে কয়েকটি প্রস্তাব

ড. একেএম সাহিদ রেজা

ছবি : বণিক বার্তা

চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ‍্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রশাসনিক অঙ্গনে বিরাট পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে। জনগণের রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার সুসংহত করার জন্য নানা উদ্যোগ এ সরকার নিতে যাচ্ছে, যার মধ‍্যে অন‍্যতম ব‍্যাংক খাত সংস্কার। এ লক্ষ‍্যে অভিজ্ঞ ও মেধাবী ব‍্যক্তিদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে।

ব্যাংক ছাড়া অর্থনীতির কথা চিন্তাও করা যায় না। অর্থনীতিতে ব‍্যাংক খাত অন‍্যতম ভূমিকা পালন করে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা আরো বিস্তৃত হয়েছে। একটি আধুনিক দায়িত্বশীল ব‍্যাংকিং কাঠামো দেশ, রাষ্ট্র ও জনসাধারণের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন উদাহরণ আছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করে ব‍্যাংক ব‍্যবস্থাপনা কীভাবে কাজ করে তার ওপর। 

স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সরকারি মালিকানার ব‍্যাংকিং ব‍্যবস্থা নিয়ে। সে সময়ে দেশের সরকার হয়তো একটি সর্বজনীন মালিকানার দেশ চালাতে চেয়েছিল, তাই সরকারীকরণকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল পাওয়া গেল চূড়ান্ত অব‍্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত দুর্বল হয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়া এবং শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা বিপর্যয় ও সংকট। পরে সরকারের পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি মুক্তবাজারের দিকে ছুটতে শুরু করে। ব‍্যক্তি খাত ধীরে ধীরে পুষ্ট হতে থাকে। 

১৯৮৩ সালে তৎকালীন সরকার প্রথম বেসরকারি খাতে ব‍্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়। বর্তমানে বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা ৪২, যার মধ্যে ৩৪টি প্রচলিত ব্যাংক এবং বাকি আটটি ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংক। এর বাইরে প্রায় ৩৫টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের ব‍্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ‍্য অর্জনে সম্পূর্ণ ব‍্যর্থ হয়েছে। জনগণের আমানত ও আকাঙ্ক্ষা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে ‘কার্টেল’ বা ‘কতিপয়তন্ত্র’ তৈরি করেছে। তাই এখন প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ হচ্ছে বেসরকারি ব‍্যাংক অথবা নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব‍্যবস্থাপনা আর লুটপাটের নিত‍্যনতুন কাহিনী। 

বতর্মান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে এখন সুযোগ এসেছে যাচাই করে দেখার যে কেন এ রকম ঘটল। আমাদের দেখা দরকার যে কী ছিল সেসব আইনি বন্দোবস্ত যা দিয়ে ইচ্ছামতো ধ্বংস করা হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, মানুষের আমানত ইত্যাদি, যা লুটে নিয়েছে অল্প ক’জন মানুষ। বাংলাদেশের ব‍্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থার দুটি মূল চালিকাশক্তি নিয়ে আজকের এ লেখায় আলোচনা করতে চাই। আর সেগুলো হলো বাংলাদেশের বেসরকারি ব‍্যাংক ও নন-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক ও ব‍্যবস্থাপনার বর্তমান কাজের অবস্থা এবং উত্তরণের জন্য আর্থিক ব‍্যবসায় সুশাসন নিশ্চিত করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ‍্য অর্জনের কয়েকটি প্রস্তাব। 

সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের গঠন ও এর ভূমিকা নিয়ে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর উদ্যোক্তা (স্পন্সর/প্রমোটার) অবস্থানটির পরিবর্তন করে সব উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগকারী হিসেবে মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ ব্যাংক মূলত জনগণের আমানতে চলে, তাই এটি পাবলিক এন্টারপ্রাইজ বা জনগণের প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের মালিক বনে যাওয়ার ধারণার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সাংস্কৃতিক ও আইনি পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যাংক পরিচালকের পদ-পদবি সম্মানীয়, তবে লোভনীয় হওয়া উচিত নয়। ‘অফিসার অব দ্য পাবলিক’ হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা কোয়াসি রেগুলেটর ভূমিকায় ব্যাংক পরিচালনা, গ্রাহক-আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের স্বার্থে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনা, সুশাসনের আলোকে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দেখাশোনা করবে। পরিচালনা পর্ষদ কোনো ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করবেন না বা জড়িত হবেন না। বর্তমানের ব‍্যাংকিং কোম্পানি আইন সংশোধন করে এ বিধান তৈরি করা দরকার। বোর্ড নির্বাহী কমিটি নামক বিশেষ কমিটি বিলুপ্ত করা দরকার। পরিচালক বা বোর্ড সদস্যরা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অডিট কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন। 

পরিচালনা পর্ষদ মাসে একটি সভা করবে। সভায় অংশগ্রহণকারী পরিচালকদের সম্মানী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। ঋণ-বিনিয়োগ, নিয়োগ-পদোন্নতি ও দৈনন্দিন প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালকদের বা পরিচালনা পরিষদের যুক্ত হওয়া ব‍্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের এক বড় কারণ। পরিবর্তিত ব‍্যাংক জ্ঞানের অভাব ও কার্টেল সংস্কৃতির ভিত্তিতে ঋণ অনুমোদন হয়েছে যা প্রকারান্তরে লুটপাট হিসেবে বিবেচনা করা যায়। 

বর্তমানে ব‍্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সর্বোচ্চ ২১ জন পরিচালক নির্বাচিত হতে পারেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র বা স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা পর্ষদ সদস্যদের ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ ভাগ উদ্যোক্তা পরিচালক। এ বিরাট উদ্যোক্তা পরিচালকগোষ্ঠীর পাশে কথিত স্বতন্ত্র বা স্বাধীন পরিচালকরা লেজের মতো নিষ্কর্মা হয়ে থাকেন। ব‍্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও এদের তেমন কোনো গুরুত্ব দেয় না। ফলে ব্যাংক পরিচালনায় বা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্বতন্ত্র পরিচালকরা কোনো মূল্যসংযোজন করতে পারেন না। তারাও লোক দেখানো বা নিয়ম রক্ষার যাতায়াত করেন এবং উপরি হিসেবে দু-একজন চেনাজানা ব্যক্তিকে চাকরি-বাকরি বা ঋণ পাইয়ে দিতে একটু-আধটু সাহায‍্য করতে পারলেই ধন্য হয়ে যান। বেশির ভাগ ব‍্যাংক ও নন-ব‍্যাংক স্বতন্ত্র পরিচালকদের অবস্থান এ রকমই। প্রকৃত অর্থে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ‍্য দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে চাইলে স্বতন্ত্র বা স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা মোট কার্যরত পরিচালকের অর্ধেক করা উচিত। আর তাদের মধ্যে নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপস্থিতি থাকতে হবে। তবে সবার জন্যই মেধা ও অভিজ্ঞতা পরিচালক পদে নিয়োগের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। 

স্পন্সর ডাইরেক্টর বা উদ্যোক্তা পরিচালকরা বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের ২ শতাংশ বা ততোধিক শেয়ার ধারণ ও ন্যূনতম দায়সারা শিক্ষা অভিজ্ঞতা ও কিছু যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। ফলে মেধাবী দায়িত্বশীলরা পরিচালনা পর্ষদে আসতে পারেন না। এত বড় অংকের শেয়ার ধারণের বিধানের কারণে তৈরি হয়েছে ‘কতিপয়তন্ত্র’। বর্তমানের ব‍্যাংকিং কোম্পানি আইনের পরিবর্তনের আগে এ অংক ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা মূল‍্যের শেয়ার ধারণ। ব‍্যাংকিং কোম্পানি আইনের সর্বশেষ সংশোধনীর সুবিধা নিয়ে একই ব্যক্তি বা পরিবার কেয়ামত পর্যন্ত পরিচালক নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন, যাদের বেশির ভাগই অর্ধশিক্ষিত পশ্চাৎপদ চিন্তার মানুষ। ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের এ বিধানই বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ধ্বংসের অন‍্যতম কারণ। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদ্যোক্তা/বিনিয়োগকারী পরিচালক নির্বাচনে মেধা ও অভিজ্ঞতা বিবেচ্য বিষয় করা উচিত। ব‍্যাংক-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, যেমন ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে যা ৪৫-৬৫ বছরের মধ্যে হতে পারে। ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে আধুনিক নতুন চিন্তা ও মেধার প্রয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। 

ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইনটি বিগত সরকার শেয়ারবাজার তেজি করার উদ্দেশ্যে করেছিল, কিন্তু ফল কী হয়েছে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে? অনেক ব‍্যাংকের শেয়ার এখন ঘোষিত মূল‍্যের নিচেও লেনদেন হয়। সংশোধিত ব‍্যাংকিং কোম্পানি আইনের অপব্যবহার করে ব্যাংক খাতে মনোপলি বা কতিপয়তন্ত্র বা কার্টেল তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তা পরিচালকের ন্যূনতম ২ শেয়ার ধারণ আইন বাতিল করে কমপক্ষে এক বছর মেয়াদে ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণের বিধান করা যেতে পারে। শিক্ষিত মেধাবী মানুষকে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বর্তমান ন্যূনতম শেয়ার ধারণ ও কতিপয়তন্ত্র তৈরির কালো আইন বাতিল করা উচিত। কারণ দেশের বর্তমান ব্যাংকগুলোয় মোট আমানতের পরিমাণের বিপরীতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২-৩ শতাংশ মাত্র, কিন্তু পুরো প্রতিষ্ঠানই উদ্যোক্তা পরিচালকরা মালিক পরিচয়ে করায়ত্ত করে ফেলেছেন। 

পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন বা অবস্থানের সময়সীমা থাকা উচিত। আমৃত্যু অথবা কেয়ামত পর্যন্ত কোনো পদে থাকার সুযোগ থাকা সংগত নয়। আজকের সময়ে ব‍্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত অর্থে জনগণের প্রতিষ্ঠান। তাই এখানে নিয়মিত মেয়াদে মানুষ এবং চিন্তাভাবনার রদবদল দরকার। কেউ কোনো অবস্থাতেই দুই মেয়াদের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। এ ধরনের বিধান সুশাসনের জন্য অত‍্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

বাংলাদেশে বেসরকারি বা প্রাইভেট ব্যাংকের যাত্রা শুরুর সময় থেকেই চাকরিপ্রার্থীদের কাছে এ প্রতিষ্ঠান কুলীন গোত্রভুক্ত হয়ে যায়। মোটামুটি মেধাবী তরুণগোষ্ঠী আগ্রহ ও সচ্ছল জীবনের স্বপ্ন নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়। ব্যক্তিগত দুর্নীতির সূচকে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছেন। পেশাজীবী ব্যাংকারদের মূল কেন্দ্রবিন্দু ও দায়বদ্ধ করে আগামী দিনের ব্যাংক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। ঋণ বিনিয়োগ অনুমোদন পুরোপুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব থাকবে; তবে বোর্ডসভায় এ বিষয়ে অবহিত (information) মেমো উপস্থাপন করে কোন ধরনের ব্যাংকিং ব্যবসা তারা করছে তা পর্ষদকে জানাবে। ঋণ-বিনিয়োগ মঞ্জুর ও দৈনন্দিন কার্যাবলি পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে সর্বোচ্চ নির্বাহীদের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ক্রমে কমিটি গঠন করে নিয়মিত সভার মাধ্যমে কার্যকর ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করবেন। এই কমিটিকেই বরং নির্বাহী কমিটি হিসেবে বলা যেতে পারে। পরিচালনা পর্ষদ বা বোর্ড নির্বাহী কমিটি নামে অথবা এ ধরনের কোনো কমিটি থাকবে না। বড় অংকের ঋণ অনুমোদনের পর সেই ঋণের বিস্তারিত ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। 

সুষ্ঠু ও সময়মতো ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার প্রয়োজনে কখনো কখনো সাসপেন্স/সাসপেন্ড হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করতে হতে পারে। তবে তা অবশ্যই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে পরিচালিত সর্বোচ্চ নির্বাহী কমিটির সভায় পূর্ব অনুমোদন হতে হবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক অংকের নানা ধরনের গল্প শোনা যায়। সুশাসনের জন্য এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই প্রয়োজন। 

একজন পেশাজীবীর জন্য পদোন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় মালিক-কর্মচারী সম্পর্কটি গত ৪০ বছরে ডালপালা ছড়িয়ে মাটির গভীরে ঢুকে গেছে। প্রায় প্রতিটি কর্মকর্তাই পদোন্নতির জন্য মালিক পক্ষের দাসের ভূমিকা পালন করে। যত ওপরে ওঠে, সামান্য ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য ততই সে দাস আর প্রভুর সম্পর্কে ঢুকে যায়। এ সংস্কৃতির পরিবর্তন না আনতে পারলেন ব্যাংকিং শিল্প কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনার আলোকে যথাযথ ও সময়োপযোগী মানসম্পন্ন Key points indicators (KPI) অনুসরণ করে সময়মতো নিয়মমাফিক তদবিরবিহীন পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। পরিচালনা পর্ষদ কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে কোনো ভূমিকা নিতে পারবে না। 

বাংলাদেশের ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ আজ মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। তবে অর্ধেক তরুণ জনশক্তির উদ্যম ও মেধার এ অর্থনীতির খাতটিতে সুশাসন নীতিমালার চর্চা শুরু করলে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে। অসম্ভব সম্ভবের দেশ এ বাংলাদেশ। 

ড. একেএম সাহিদ রেজা: ব‍্যবসায়ী ও শিল্পপতি 

[লেখকের ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স ইন ব্যাংকিং সেক্টর উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শিরোনামের পিএইচডি গবেষণাকাজের ফলাফলের আলোকে প্রস্তাবগুলো তৈরি]

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন