বাংলাদেশ সরকারের
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্ব
শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করে আসছে। এ বছরও নানামুখী আয়োজনের মধ্য দিয়ে
‘বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৪’ উদযাপন করছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি
শিশুর অধিকার রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার’। এই শপথের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ‘শিশু
অধিকার সপ্তাহ ২০২৪— পানিতে ডোবা প্রতিরোধ হোক প্রতিটি শিশুর
অধিকার’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ,
বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)।
সার্বিক সহযোগিতায়
ছিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও সিনারগোস বাংলাদেশ। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন নীতি নির্ধারক
প্রতিনিধি, পানিতে ডোবা প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী প্রকল্পের প্রতিনিধি, উন্নয়ন
সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, কমিউনিটি প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও শিশুদের জন্য
কাজ করে এমন দেশী এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। সিরডাপ মিলনায়তনে
আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত
সচিব এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির এবং মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তানিয়া খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে
তানিয়া খান বলেন, দিনদিন পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এটি প্রতিরোধে
শহর ও গ্রামে সমন্বিত কার্যক্রম নিতে হবে। শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয়
অবকাঠামো তৈরি ও অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। সাঁতারকে বাধ্যতামূলক শিক্ষার
অংশ করা যেতে পারে। এ সময় তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাঁতার প্রশিক্ষণ বিষয়ে অবকাঠামোগত
ও কৌশলগত সুব্যবস্থাপনা করার উপায় নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, আইসিবিসি প্রকল্পের
প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোসা. ফেরদৌসি বেগম বলেন, গ্রামাঞ্চলের
শিশুদের সাঁতার শেখানো অনেক সময় বাহুল্য মনে করা হয়। কিন্তু অধিক জলাশয় থাকার কারণে
গ্রামের শিশুরাই সবচেয়ে বেশি পানিতে ডোবার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের
অধীনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু-যত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর
প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্পের মাধ্যমে
তৃণমূল পর্যায়ে শিশু সুরক্ষায় বিশেষ করে পানিতে ডোবা থেকে তাদেরকে নিরাপদ রাখতে কাজ
করছে। সকলের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
সেমিনারের স্বাগত
বক্তব্যে সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. একেএম ফজলুর
রহমান বলেন, বৃহৎ পরিসরে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন সঠিক তথ্য-উপাত্ত।
সরকারিভাবে এই তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল
আলোচনার বিষয় ছিল ‘পানিতে ডোবা প্রতিরোধ’ শিশুর জন্য কোনো বিশেষ প্রাপ্তি নয়, মৌলিক
অধিকার। আলোচনাটি পরিচালনা করেন সিনারগোস বাংলাদশের কান্ট্রি ডিরেক্টর এষা হোসেন।
প্যানেল আলোচনায়
অংশগ্রহকারীদের মধ্যে কমিউনিটির প্রতিনিধি বলেন, পানিতে ডোবা প্রতিরোধ কার্যক্রমকে
টেকসই করার জন্য পর্যাপ্ত কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে হবে ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সেমিনারে মুল প্রবন্ধ
উপস্থাপন করেন সিআইপিআরবির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. আমিনুর
রহমান। বাংলাদেশের পানিতে ডুবে মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, শিশুদের সুস্থ্যভাবে
বেঁচে থাকার অধিকার শিশু সুরক্ষার সর্ব প্রথম ধাপ। তাই প্রতিরোধযোগ্য এই মৃত্যু রুখে
দিতে সামগ্রিকভাবে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
সিআইপিআরবি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ১—৫ ও ৬—১০ বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। মৃত্যুর এই মহামারি প্রতিরোধে ১—৫ বছর বয়সী শিশুদের প্রয়োজন সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান এবং ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের প্রয়োজন সাঁতার দক্ষতা।