চার বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবার সুদহার কমাল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। গত বুধবার দেশটির আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্টে সুদহার কমানোর ঘোষণা দেয়। এতে সুদহার নেমে এসেছে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশের মাঝে। খবর নিক্কেই এশিয়া ও এপি।
মূল্যস্ফীতি লাগামে আনতে দীর্ঘ সময় ধরে সুদহার রেকর্ড উচ্চতায় ধরে রেখেছিল ফেড, যা দেশটির ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি সব ধরনের ব্যবসা ও গৃহস্থালি পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। এ কারণে সুদহার কমানো ছিল অতিপ্রত্যাশিত।
সুদহার কমানোর জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ২ শতাংশে নির্ধারণ করেছিল ফেড। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির মন্থরগতি দেখা যায়, যা মার্কিন অর্থনীতিকে মন্দার আশঙ্কা থেকে রক্ষা করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপটি মূল সুদহারকে প্রায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, যা সর্বশেষ ১৪ মাস ধরে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৩ শতাংশে স্থির ছিল।
২০২২ সালের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছায়, যা গত মাসে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। যা ফেডের ২ শতাংশ লক্ষ্য থেকে বেশি দূরে নয়।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘মার্কিন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। অর্থনীতি স্থিতিশীল গতিতে বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি কমছে ও শ্রমবাজার শক্তিশালী রয়েছে। আমরা অর্থনীতিকে এ অবস্থানে রাখতে চাই।’
তিনি আরো জানান, কয়েক বছর ধরে সুদহার না কমিয়ে ধৈর্য ধারণ করেছে ফেড। এখন তার ফল পাওয়া যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও এখন ফেডের লক্ষ্যের অনেক কাছাকাছি রয়েছে।
কভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার শূন্যের কাছাকাছি ছিল। সেদিকে আর ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান জেরোম পাওয়েল। সঙ্গে এও বলেন, ‘সুদহার আরো কমানোর জন্য সুযোগ খুঁজছে ফেড।’
ফেডের নীতিনির্ধারকরাও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এ বছর দুটি বৈঠক থেকে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সুদহার অতিরিক্ত দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমতে পারে। এছাড়া ২০২৫ সালে আরো চার দফা এবং ২০২৬ সালে দুই দফা সুদহার কমানোর পরিকল্পনা করছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সুদহার নীতিকে এমন কিছুতে পুনর্গঠনের সময় এসেছে, যা এ সময়ের জন্য উপযুক্ত। আমরা বলছি না, মিশন সম্পন্ন হয়েছে। তবে যে অগ্রগতি অর্জন করেছি তাতে আমরা উৎসাহিত বোধ করছি।’
অবশ্য অর্ধ শতাংশীয় পয়েন্টে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তে ফেডের কমিটির সবাই একমত হতে পারেনি। একজন গভর্নর এর বিপক্ষে দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমানোর পক্ষে ভোট দেন। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার-সংক্রান্ত মিটিংয়ে এ ধরনের বিরুদ্ধমত দেখা গেল।
ফেডের সিদ্ধান্ত বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্টেট স্ট্রিটের জ্যেষ্ঠ কৌশলবিদ মারভিন লোহ জানান, সুদহারে কাটছাঁট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। অর্ধ-পয়েন্ট কাট আরো বলছে যে চাকরির বাজারে মন্দা ও অব্যাহত অবনতির বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবারের সুদহার কমানোর আগে তা ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ছিল। ২০২২ সালের মার্চ থেকে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত ১১ দফায় সুদহার বাড়িয়েছে ফেড। কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ব্যাপক মূল্যস্ফীতি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির এতটা উল্লম্ফন দেখা যায়নি। এছাড়া বৈশ্বিক আর্থিক খাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় অংশে সম্পর্কিত হওয়ায় এ সুদহারের প্রভাব ছিল ব্যাপক।