ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

জনবল সংকটে মিলছে না হৃদরোগের উন্নত চিকিৎসা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ফরিদপুর

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

একজন হৃদরোগীর পূর্ণাঙ্গ সেবা দেয়ার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। সিসিইউ, আইসিইউ ও ক্যাথল্যাব থাকলেও সংকট রয়েছে ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানের। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই পদে জনবল না থাকায় সাত বছরেও শুরু করা যায়নি এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং স্থাপনের চিকিৎসা। এতে ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলার দরিদ্র রোগীরা সরকারিভাবে হার্টের উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মূলত এনজিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টের নিজস্ব রক্তনালীর প্রবাহে কোনো বাধা বা ব্লক আছে কিনা তা নিশ্চিত করা হয়। এনজিওগ্রামের রিপোর্টে ধমনিতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত বা ব্লক হওয়ার তথ্য জানা গেলে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া সচল রাখতে এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে স্টেন্ট বা করোনারি স্টেন্ট পরানো হয়। প্রচলিত ভাষায় এটি রিং হিসেবে পরিচিত। সরকারি হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করাতে ৫-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষা করাতে খরচ হয় ১৫-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রোগীরা বলছেন, হার্টের সমস্যা নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলেও এনজিওগ্রাম বা হার্টে রিং স্থাপন করতে পারছেন না তারা। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে বাড়তি টাকা খরচ করে সেবা নিতে হচ্ছে। কেউ কেউ অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ফরিদপুর শাখার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তারেক আইয়ুব খান বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলাকেও দায়ী করেন তিনি। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সুবিধা দিতেই যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও এনজিওগ্রাম বন্ধ রাখা হয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামালউদ্দিন আহম্মেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, রেজিস্টার, সহকারীসহ বেশ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিষ্ট চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান হলেই এনজিওগ্রাম ও রিং স্থাপনের মতো উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে পারি।’

এদিকে হাসপাতালে অর্ধশত কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও ব্যবহার যাচ্ছে না বছরের পর বছর। বাক্সবন্দি থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে হাসপাতালে ৭৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সে সময় আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারিতে কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আহম্মেদ এন্টার প্রাইজ। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাজ্জাদ মুন্সীর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের ক্যাথল্যাব, ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার এমআরআই মেশিন, ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, রেডিও থেরাপি মেশিনসহ অর্ধশত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। তবে তা রোগীদের কাজে আসছে না।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘যন্ত্রপাতিগুলো কী অবস্থায় রয়েছে তা নিশ্চিত হতে টেকনিশিয়ান পাঠাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে পড়ে থাকায় এখন তা সচল করা যাবে কিনা, সেটা নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন