প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প

কুষ্টিয়ায় বরাদ্দ পেয়েছে অন্যরা বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত খামারি

শুভব্রত আমান, কুষ্টিয়া

ছবি : বণিক বার্তা

প্রকৃত খামারি তৈরি এবং তাদের ভাগ্যোন্নয়নে ২০২৯ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রাণিসম্পদ ডেইরি উন্নয়ন নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এক বছর আগে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো চলমান। তবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রকৃত খামারিরা। তাদের দাবি, অনেকে খামারি সেজে সুবিধা নিচ্ছেন বা নিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা করছেন প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে প্রকৃত খামারি বরাদ্দই পাননি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটির বিষয়ে তারা খুব বেশি জানেন না। কারণ বেশির ভাগ প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। স্থানীয় পর্যায়ে কেবল গ্রুপ গঠন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তারা দেখভাল করেছেন।

ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আল মামুন হোসেন মোল্লা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বরাদ্দগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হয়েছে। প্রকল্প বাছাইও সেখান থেকে হয়েছে। কোনো কিছু ঘটলে কেন্দ্রীয়ভাবেই তার সুরাহা হবে। উপজেলাগুলোয় প্রকল্প ছিল। প্রকল্প নিয়ে জেলার দপ্তরে চিঠি দিয়েও জানানো হয়নি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া ৬১ জেলার ৪৬৫ উপজেলা এবং সব সিটি করপোরেশন পৌরসভায় মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। তবে এখনো প্রকল্পের মেয়াদ চলমান। প্রকল্পে অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। অর্থের মধ্যে বিশ্বব্যাংক সহায়তা করছে হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত খামারি তৈরি তাদের ভাগ্যোন্নয়ন করা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করেছে আলভি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ডেইরি ফার্ম। প্রকল্পের আওতায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতের একটি কারখানা বা খামার করার কথা বলে ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ওই প্রতিষ্ঠানটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বালিরদিয়াড় গ্রামে মিলন হোসেনের বাড়িতে থাকার কথা। তবে সরকারের টাকায় কেনা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতের মেশিন মিলনের বাড়িতে পাওয়া যায়নি বা কেনা হয়নি তা মিলন নিজেই জানিয়েছেন। অনুদানের শর্ত ছিল খামারিদের ম্যাচিং গ্র্যান্টের টাকা নিজস্ব অর্থায়নে মিষ্টি তৈরির মেশিন, দই ইনকিউবেটর, মিক্সচার মেশিন, দুধ শীতলীকরণ যন্ত্র, প্যাকিং মেশিন, লাবাং মেশিন, পাস্তুরাইজার মেশিন এসএস চুলা কিনতে দেয়া হবে অর্থ সহায়তা।

সরজমিনে আলভি এন্টারপ্রাইজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মালিক মিলন হোসেন ঠিকাদারি করেন। তার আধুনিক ডেইরি ফার্ম নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহর আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। পরিচয়ে প্রকল্পের অর্থ পেয়েছেন মিলন হোসেন।

বিষয়ে জানতে চাইলে মিলন হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রয়েছে। দৌলতপুরের ঠিকানায় নেয়া প্রতিষ্ঠান কীভাবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে (দৌলতপুরে) তেমন দই বা মিষ্টির চাহিদা নেই। এজন্য ওখানে শিফট করেছি।

তিনি দাবি করেন, বিষয়ে তিনি অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন। তবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও তার কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। এরপর অবশ্য মিলন হোসেন দাবি করেন, তার কারখানা চট্টগ্রামে রয়েছে।

প্রকল্পের শর্ত হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাজার সুবিধা উন্নয়ন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহনশীলতা চেষ্টা হিসেবে দুগ্ধ বা দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে মোট বাজেটের অর্ধেক বা তার অনধিক ৮৩ লাখ টাকা প্রকল্প থেকে দেয়া হবে। একই শর্তে বরাদ্দ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারীর ব্যবসা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতসংক্রান্ত হতে হবে এবং উৎপাদন কার্যক্রম প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় হতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে এক বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে।

একটি সূত্র বলেছে, আলভি এন্টারপ্রাইজের মালিকের ধরনের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না এবং তিনি শর্ত ভঙ্গ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তার কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। তিনি ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে সরকারের সহায়তা করা টাকায় যন্ত্রপাতি কিনে তা বিক্রি করে দিয়েছেন অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে।

প্রকল্পের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়ার পর মিলনের বাড়ি পরির্দশন করেছি। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখে এসেছি। এরপর তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হলে মিলনকে সহায়তা করা হয়। তবে মিলনকে টাকা দেয়ার সময় আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি জানার পর লোক পাঠিয়ে মিলনের কারখানা পরিদর্শন করানো হয়েছে। কিন্তু সরকারের আর্থিক সহায়তায় কেনা মেশিন সেখানে পাওয়া যায়নি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল বলেন, ‘দৌলতপুরের জন্য নেয়া প্রকল্প অন্য কোথাও ব্যবহার করা আইনবহির্ভূত। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। মিলনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন