ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী

নিষিদ্ধ জালে চিংড়ির রেণু আহরণ ধ্বংস হচ্ছে অন্য প্রজাতির মাছ

এইচ এম জাকির, ভোলা

ভোলার মেঘনা নদী থেকে মশারি জালে রেণু আহরণ করার পর সঙ্গে থাকা অন্য প্রজাতির পোনা তীরে ফেলে দেয়া হয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সাধারণত চৈত্র থেকে আষাঢ় তিন মাস বাগদা চিংড়ির রেণুর মৌসুম। সময় প্রাকৃতিকভাবে নদীগুলোয় উৎপন্ন হয় রেণু। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভোলার লক্ষাধিক জেলে মেঘনা তেঁতুলিয়া নদী থেকে এসব রেণু আহরণ করছে। তবে রেণু আহরণের জন্য নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করায় ধ্বংস হচ্ছে অন্য প্রজাতির মাছের পোনা। যদিও নদ-নদী থেকে রেণু আহরণ নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য বিভাগ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মশারি জালের মাধ্যমে প্রথমে রেণু আহরণ করা হয়। পরে বিশেষ এক ধরনের সাদা চামচ দিয়ে এক পাত্র থেকে কাঙ্ক্ষিত রেণু বাছাই করে অন্য পাত্রে রাখা হয়। এর সঙ্গে থাকা অন্য প্রজাতির মাছের পোনা তীরেই ফেলে দেয়া হয়। একটি রেণু বিক্রি করলে পাওয়া যায় থেকে আড়াই টাকা। কখনো টাকাও বিক্রি হয়। তিন মাসের পেশা অনেকটা লাভজনক হওয়ায় জেলে পরিবারের নারী, পুরুষ এমনকি শিশুরাও ঝুঁকে পড়ছে রেণু আহরণে।

ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাগদা আহরণের কারণে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছের পোনা মারা যাচ্ছে। জেলেরা যাতে রেণু আহরণ করতে না পারে, এজন্য মৎস্য বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তবে কোস্টগার্ড সদস্যরা রেণু আহরণ করতে দেখলে সেগুলো অবমুক্ত করেন বলে দাবি করেছেন কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন ভোলার ভারপ্রাপ্ত অপারেশন অফিসার লে. সাকিব মাহাবুব। তিনি বলেন, ‘রেণু আহরণ বন্ধে কোস্টগার্ডের অভিযানে অব্যাহত রয়েছে। গত এক মাসে মেঘনা তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ বাগদা চিংড়ির রেণু অবমুক্ত করা হয়েছে।

রেণু আহরণকারী তাছলিমা, রহিমা, আরজুসহ আরো কয়েকজন বলেন, ‘শুনেছি রেণু ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের কেউ কখনো কিছুই বলে না। কারণে আমরা রেণু ধরতে সকাল-বিকাল নদীতে পড়ে থাকি।

দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মন্নান বলেন, ‘আমার এলাকার অনেকেই নদী থেকে চিংড়ির রেণু আহরণ করে। যদিও অভাবের তাড়নায় তারা এগুলো করছে। তবে বহুবার নিষেধ করা হলেও তারা শুনছে না।

বোরহানউদ্দিনের হাকিমুদ্দিন বাজারের মৎস্য আড়তদার আবুল বাসার, হানিফ মিয়া, নসু মিয়া দৌতলখানের জাবু, মন্নান মিয়া বলেন, ‘রেণু আহরণ নিষিদ্ধ। তবে জেলেরা আহরণ করে বলে আমরা তা ক্রয় করে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছি।

সদর উপজেলার ইলিশা এলাকার রেণু ব্যবসায়ী ফারুক ব্যাপারী বলেন, ‘নদীতে বেশি পরিমাণে বাগদা চিংড়ির রেণু উৎপন্ন হয়। তাই জেলেরা রেণু আহরণ করছে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। অন্য জেলার তুলনায় ভোলার মেঘনা নদীতে অনেক বেশি রেণু ধরা পড়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোলার তুলাতলী, ধনিয়া, রামদাসপুর, ভোলার খাল, চড়ার মাথা, কাঠির মাথা, মাঝিরহাট, চৌকিঘাটা, মাঝের চর, ইলিশা, ভেদুরিয়া, হাসান নগর, মির্জাকালু, হাকিমুদ্দিন, স্লুইসঘাট, বেতুয়া, ঢালচর, কুকরী-মুকরী, চর পাতিলা গঙ্গাপুরসহ মেঘনার তিন শতাধিক স্থানে জেলেরা রেণু আহরণ করে। জেলেদের কাছ থেকে আড়তদাররা এসব রেণু কিনে নেন। পরে সেগুলো বেশি দামে ঢাকা, বরিশাল, যশোর, সিলেট, খুলনা, বাগেরহাট, পাইকগাছা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন