সিনেমারই মানুষ ছিলেন রামোজি রাও

মাহমুদুর রহমান

রামোজি রাও (১৬ নভেম্বর ১৯৩৬-৮জুন ২০২৪) ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ভারতের অনেক সিনেমার সঙ্গে রামোজি রাও নামটি যুক্ত। অনেক সিনেমারই কৃতজ্ঞতা অংশে তার ও রামোজি ফিল্ম সিটির নাম পাওয়া যায়। ৮৭ বছর বয়সে ৮ জুন রামোজি রাও মারা গেলেন। অসুস্থ হয়ে তিনি হায়দরাবাদে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে ৫ জুন হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইহলোক থেকে চলে গেলেও নিজের ছাপ ও কৃতিত্ব রেখে গেছেন বহু সিনেমায়। 

রামোজি রাওকে মিডিয়া টাইকুন বলা হয়। তিনি ছিলেন রামোজি গ্রুপের চেয়ারম্যান। এর অধীনে আছে ইটিভি নেটওয়ার্ক ও রামোজি ফিল্ম সিটি। মূলত রামোজি ফিল্ম সিটিই ভারতের বহু সিনেমার পীঠস্থান। রামোজির পুরো নাম চেরুকুরি রামোজি রাও। জন্ম ১৯৩৬ সালে। তিনিই রামোজি ফিল্ম সিটির প্রতিষ্ঠাতা। এটি ভারতের বৃহত্তম স্টুডিও ও শুটিং স্পট।

একটি ফিল্ম সিটি মানে হচ্ছে সেখানে সিনেমার যাবতীয় বিষয় থাকা সম্ভব। সেখানে থাকে শুটিং স্পট, স্টুডিওসহ অন্যান্য ব্যবস্থা। রামোজি ফিল্ম সিটি স্থাপন হয় ১৯৯৬ সালে। এটি হায়দরাবাদের আবদুল্লাহপুরমে অবস্থিত। ফিল্ম সিটির আয়তন প্রায় ১ হাজার ৬৬৬ একর। এটি কেবল ভারতের নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টুডিও কমপ্লেক্স। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে এটি জায়গা করে নিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমার শুটিং হয়েছে এ ফিল্ম সিটিতে। তবে কেবল সিনেমার শুটিং নয়, অনেকে এটিকে পিকনিক স্পট বা ছুটি কাটানোর জন্যও ব্যবহার করে থাকেন।

রামোজি রাও এ ফিল্ম সিটি স্থাপনের আগে সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। প্রযোজক হিসেবেই সিনেমায় তার যাত্রা হয়। তেলেগু সিনেমা ‘শ্রীবারিকি প্রেমলেখা’ দিয়ে তার প্রযোজনা শুরু হয়। মূলত তিনি তেলেগু, কন্নড় সিনেমাই প্রযোজনা করেছেন। মজার ব্যাপার হলো এর বাইরে বাংলা, মালয়ালম ও হিন্দি সিনেমাও প্রযোজনা করেছেন। বিশেষত সন্দীপ রায় পরিচালিত ‘ড. মুনশির ডায়েরি’র প্রযোজক রামোজি রাও। এছাড়া ফেলুদার একাধিক সিনেমা এ ফিল্ম সিটিতে শুটিং হয়েছে। তার বাইরেও কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে রামোজি রাও ফিল্ম সিটিতে।

হিন্দি বা অন্যান্য সিনেমা প্রযোজনায় খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না রামোজি। কিন্তু তার ফিল্ম সিটিতে এসব সিনেমার শুটিং হতো। সিনেমার সঙ্গেই আজীবন ছিলেন তিনি। তেলেগু সিনেমায় অবদানের জন্য পেয়েছেন চারটি ফিল্মফেয়ার, পাঁচটি নন্দী অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া ভারতের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্ম বিভূষণও পেয়েছেন রামোজি রাও। সিনেমা ও ফিল্ম সিটি ছাড়াও তিনি ইটিভি নেটওয়ার্কেরও নেপথ্যের মানুষ। আবার তেলেগু ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ‘এনাড়ু’ও তার হাত ধরে শুরু হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে পত্রিকাটি শুরু করেন তিনি। এত কিছুর মধ্যেও তিনি ছিলেন আপাদমস্তক সিনেমারই মানুষ।

রামোজি রাওর মৃত্যুতে সারা ভারতের সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করেছেন। রাজ্য সরকার তার মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদিও টুইট করেছেন রামোজি রাওকে নিয়ে।

সিনেমার মানুষের কাছে প্রিয় ছিলেন রামোজি রাও। ফিল্ম সিটিতে সিনেমার কাজ করার সময় অনেকে মিশেছেন তার সঙ্গে। তার অনাড়ম্বর জীবনযাপন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা নির্মাতারা। সেই সঙ্গে শিল্প নির্দেশক নিতিশ রায় জানান, রামোজি ছিলেন সত্যিকার একজন কাজপাগল মানুষ। সবসময় কাজ নিয়েই মেতে থাকতেন। তা সিনেমা হোক বা পত্রিকা। কাজের মধ্যে থেকেই চলে গেছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন