জুড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যা বাড়লেও জনবল সংকট

আফরোজ আহমদ I মৌলভীবাজার

প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ রোগী সেবা নিতে আসেন জুড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

হাওর ও চা বাগানঅধ্যুষিত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বাস। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জুড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থাকলেও পরে তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে চাহিদা অনুপাতে বাড়েনি জনবল। হাতেগোনা কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। এক্স-রে, ইসিজির মতো প্রাথমিক পরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই এখানে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন একটি ভবন নির্মাণ হয়েছে ঠিকই, তবে তা পরিচালনার মতো লোকবল, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়নি। জরুরি কোনো রোগী হলে অন্য একটি প্রকল্পের এক্স-রে মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ল্যাবের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সীমিত। প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয় রোগীকে। এজন্য প্রত্যাশিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে এখনো ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। ৩১ শয্যার যে লোকবল থাকার কথা সেটিও নেই এখানে। চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সংকট রয়েছে। ২৬ নার্সের বিপরীতে কর্মরত মাত্র সাতজন। তিনজন মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে আছেন মাত্র একজন। শিশু, মেডিসিন, অ্যানেস্থেসিয়া, সার্জারি ও গাইনি বিভাগে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে অ্যানেস্থেসিয়া, সার্জারি ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও তারা প্রেষণে অন্য হাসপাতালে কাজ করছেন। শুধু দন্ত্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তার পদটিও খালি।

রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে গাইনি, সার্জারি ও অ্যানেস্থেসিয়া জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে চিকিৎসক না থাকায় কার্যত হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। দন্ত্য চিকিৎসক ছাড়া আর কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় মেডিকেল অফিসারই তাদের একমাত্র ভরসা। এজন্য চা-শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে। প্রান্তিক অঞ্চলের এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে দূরদূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। উপজেলার গোয়ালবাড়ী, ফুলতলা, সীমান্তবতী চা বাগানের বাসিন্দা ও পাশের বড়লেখা উপজেলার কিছু রোগীও সেবা নিতে আসেন এখানে।

সেবাপ্রত্যাশী বেলাল হোসেন বলেন, ‘এক্স-রে সেবা চালু না থাকায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে করাতে হয়। এতে প্রতিটি এক্স-রে বাবদ গুনতে হয় অতিরিক্ত ৪০০-৫০০ টাকা।’ হাসপাতালে দ্রুত এক্স-রে সেবাটি চালু করে সাধারণ মানুষের সরকারি সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আগের চেয়ে স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। যেসব রোগীকে সেবার আওতায় আনা যায় না তাদের রেফার করা হচ্ছে। জরুরি যে সাপোর্ট আছে, তা দিয়ে যাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব, তাদের দেয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২৫০-৩০০ রোগী সেবা নিচ্ছে। এছাড়া ভর্তি রোগী থাকে ৩০-৪০ জন। জরুরি বিভাগে সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যাও শতাধিক। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০-৫০০ রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসে এখানে। তাদের মধ্যে অনেকের এক্স-রে করানোর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ব্যবস্থা না থাকায় জেলা সদর হাসপাতাল অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় এক্স-রে করাতে হচ্ছে রোগীদের। এতে তাদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ ও সময় ব্যয় হচ্ছে।

জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সুলতান মোহাম্মদ জাকি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ চালু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে। এর আগে শুধু জরুরি সেবা চালু ছিল। ২০২২ সালে আটজন চিকিৎসক যোগদান করেন। কিন্তু প্রেষণে অন্যত্র থাকায় মাত্র দুজন দিয়েই চলছে হাসপাতালটি। এসসিটি কর্নার থেকে মাসিক-ভিত্তিতে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সীমিত জনবল নিয়ে কোনো রকম সেবা চালিয়ে নিতে হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জনবল বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এক্স-রে চালুর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন