আওয়ামী লীগের নির্দেশনা

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য কিংবা নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমনকি যারা এরই মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরও সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-এমপিদের আওয়ামী লীগপ্রধানের এ নির্দেশনা জানানো শুরু করেছেন।

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট হবে আগামী ৮ মে। এ ধাপে ১৫০ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন ১ হাজার ৮৯০ জন। এর মধ্যে বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র। আর বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৬। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮-২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলায় ভোট হবে ২১ মে এবং তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় ২৯ মে ভোট রেখে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, এমপি-মন্ত্রীরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দলের মন্ত্রী, এমপি, সাবেক এমপি, বড় নেতাদের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-ভাতিজাসহ আত্মীয়-স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য এবং যাতে কেউ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়েছেন। তারা দলের পক্ষ থেকে সভাপতির এ নির্দেশ সব জেলা-উপজেলায় নেতা-মন্ত্রী-এমপি যারা আছেন তাদের অবহিত করছেন। আমরা সবাই বিষয়টি সমন্বয় করছি, যাতে শেখ হাসিনার নির্দেশ কার্যকর হয়।’

আইনে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন না দেয়ার কথা আগেই জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে দলটির নেতাদের নির্বাচন করতে হচ্ছে যার যার মতোই। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতার অভিমত ছিল, দলীয় প্রতীক বরাদ্দের কারণে তৃণমূলে গ্রুপিং বাড়ছে। এ কারণে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেয়ার ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেন দলের হাইকমান্ড। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, দলের প্রভাবশালী নেতারা, বিশেষ করে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় আত্মীয়-স্বজন কিংবা পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করছেন অথবা পক্ষের লোককে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এ কারণে দলের তৃণমূলের কমান্ড ভেঙে পড়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয়-স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ফোন করে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাকের ভাগনেকেও ফোন করে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক ও নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আরেক প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় গতকাল রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আওয়ামী লীগের এক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জানান, এমপি-মন্ত্রীদের যেহেতু প্রশাসনের ওপর খবরদারি করার সুযোগ আছে, সে কারণে শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন যে তাদের পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবেন না। এমনকি পছন্দের লোকের পক্ষেও সমর্থন দিতে পারবেন না তারা। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এএম কামাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক নির্দেশ দিয়েছেন যেসব এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের ফোন করে নিষেধ করতে। আমি অনেককেই এরই মধ্যে বলে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ যথাযথভাবে পালনে আমি বদ্ধপরিকর।’ 

এদিকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ঘনিষ্ঠজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকার বিষয়ে এক বিবৃতিতে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘‌বিএনপি নির্বাচনবিরোধী অবস্থান নেয়ায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকেও কৌশলগত অবস্থান নিতে হয়েছে। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিচ্ছে না। দল ও দলের বাইরে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যাতে নির্বাচিত হয় সেটাই আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন