ইরানে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়িয়ে’ হামলা চালাতে চায় ইসরায়েল

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ। মৃত সাগর উপকূলে তোলা ছবি: রয়টার্স

ইরানে হামলা চালানোর সম্ভাব্য উপায় নির্ধারণে গতকালও এক বৈঠকে বসেছিল ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন ক্যাবিনেট। বৈঠকে ইরানের ওপর ‘‌শক্ত প্রত্যাঘাতের’ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলেও ইসরায়েলি নীতিনির্ধারকদের দোটানায় ফেলে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা। এ অবস্থায় ইসরায়েলি ক্যাবিনেট ইরানে এমনভাবে হামলা চালানোর কথা ভাবছে, যাতে এ হামলার পর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু না হয়ে যায়। নেতানিয়াহু সরকারের আশঙ্কা, যুদ্ধ সর্বাত্মক আকার নিলে এ ইস্যুতে পুরোপুরি মিত্রহীন হয়ে পড়তে পারে ইসরায়েল। 

ইসরায়েল যেকোনো মুহূর্তে ইরানে সংবেদনশীল কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাদের এ আশঙ্কাকে জোরালো করে তুলেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রধানের বক্তব্য। আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেরজি হালেভি গতকাল বলেছেন, ‘ইসরায়েলি ভূমি লক্ষ্য করে ‌এতগুলো মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোন ব্যবহার করে চালানো হামলার জবাব অবশ্যই দেয়া হবে।’

যদিও এ মুহূর্তে ‘‌সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়িয়ে’ ইরানের ওপর প্রত্যাঘাত করার বিষয়টি ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এর আগে সোমবারও এ বিষয়ে এক বৈঠকে বসেছিল ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন ক্যাবিনেট। দেশটির স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বৈঠকে ইরানের ওপর সম্ভাব্য হামলা কেমন হতে পারে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারায় গতকাল আবারো এ বৈঠকের আহ্বান করা হয়। 

তবে হামলা করে ইসরায়েল যুদ্ধ এড়াতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দিহান পর্যবেক্ষকরা। কারণ ইসরায়েল হামলা করলে দ্রুততার সঙ্গে আরো জোরালো প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। 

আবার ওয়াশিংটনসহ তেল আবিবের মিত্ররাও ঘোষণা দিয়েছে, প্রত্যাঘাত হিসেবে ইরানের ওপর হামলা চালাতে হলে ইসরায়েলকে তা একাই করতে হবে। এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে আর কোনো সহায়তা পাওয়া যাবে না।

এর আগে শনিবার রাতে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে তিন শতাধিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। অধিকাংশ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল পৌঁছানোর আগেই যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান ও তেল আবিবের অন্যান্য মিত্র দেশের বিমানবাহিনী একযোগে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। ইসরায়েলি ‘‌আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে বাকিগুলোর বড় একটি অংশ। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম হলেও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে খুবই সামান্য। 

এর পর থেকেই আইডিএফের কমান্ডাররা যেকোনো মুহূর্তে ইরানে হামলা চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন। আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি গতকাল বলেছেন, ‘‌এ হামলার শাস্তি না পেয়ে পার পাবে না ইরান। আমরা এখানে তা হতে দেব না।’ 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে ইরানে হামলা চালাতে চায় ইসরায়েল। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের কোনো প্রত্যাঘাতে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না বা সহায়তাও দেবে না। ওয়াশিংটনের ভাষ্যমতে, শনিবার রাতে সিংহভাগ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার বিষয়টিকে ইসরায়েল নিজের বিজয় হিসেবে দেখতে পারে। 

বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েল—উভয় দেশের মিত্ররাই দেশ দুটিকে সংযত ও শান্তিপূর্ণ আচরণের আহ্বান জানিয়ে চলেছে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘‌প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খুব স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন আমরা ইরানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই না এ সংঘাত আরো বিস্তৃত ও প্রসারিত হোক। আমরা চাই না উত্তেজনা বাড়ুক।’ 

ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে এক ফোনালাপে চলমান উত্তেজনায় তেহরানকে সংযত আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় ইরানেরও উত্তেজনা বাড়ানোয় কোনো আগ্রহ নেই বলে ইব্রাহিম রাইসি উল্লেখ করেন বলে ক্রেমলিনের সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম আরআইএ নভস্তি জানিয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাব্দোল্লাহিয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, বেইজিং বিশ্বাস করে ইরান পরিস্থিতিকে ভালোভাবেই সামাল দিতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য) পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠাকে ঠেকাতে পারবে। 

এদিকে লেবাননের আইন এবেল এলাকায় গতকাল ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উপকূলীয় সেক্টর প্রধানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ। সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ জানিয়েছে, নিহত হিজবুল্লাহ কমান্ডারের নাম ইসমায়েল ইউসাফ বাজ। অতীতে বিভিন্ন সময়ে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটির বিভিন্ন সামরিক উইংয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। আইডিএফের দাবি, মৃত্যুর আগে তিনি লেবাননের উপকূলীয় এলাকা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ও অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।

ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর এ হামলার আগে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সংগঠনটি ইসরায়েলের বেইত হিলেল এলাকায় অবস্থিত আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স ইউনিটকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে হতাহত করেছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন