খাগড়াছড়িতে যত্রতত্র পার্কিং আর ফুটপাত দখলে সংকীর্ণ হচ্ছে সড়ক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

খাগড়াছড়িতে যত্রতত্র পার্কিং আর ফুটপাত দখলে সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে বাদ যাচ্ছে না অলিগলিও। যেখানে-সেখানে পার্ক করে রাখা হচ্ছে মোটরসাইকেল, টমটম, বাস ও পর্যটকবাহী পরিবহন। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে।

সড়কজুড়ে অব্যবস্থাপনার জন্য তদারকির অভাবকে দুষছেন শহরের বাসিন্দারা। তবে ট্রাফিক বিভাগ বলছে, প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলেও থামানো যাচ্ছে না অবৈধ পার্কিং। নগরীতে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শহরের শাপলা চত্বর থেকে চারমুখী সড়ক চলে গেছে। সবকটি সড়কই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আদালত সড়কটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আদালত, ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুলসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অফিস রয়েছে। এ সড়কের ওপর যানবাহনের পাশাপাশি পথচারী, শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষের চলাচলও বেশি। এছাড়া হাসপাতাল থাকায় অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি রোগী যাতায়াতের জন্যও বেগ পেতে হয় যত্রতত্র পার্কিং আর টমটমের কারণে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের ওপর সারি সারি মোটরসাইকেলও পার্ক করে রাখা হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এছাড়া বিআরটিসির বাস সারা বছরই থাকে এ সড়কের ওপর।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রিংকু চৌধুরী বলেন, ‘সড়কের ওপর যত্রতত্র পার্কিং বাড়ছে। মোটরসাইকেল চালাতে বেগ পেতে হয়। হাঁটতে গেলেও বিপাকে পড়তে হয়।’

পথচারী সেন্টি চাকমা জানান, পথ চলতে ভয় লাগে। সড়কে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। যে যার মতো করে চলছে। ওভারটেকিংয়েও মানছে না নিয়ম। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। টমটমের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। ফুটপাতও দখল হওয়ায় পথচলা মুশকিল।

শহরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, যেখানে নো পার্কিং লেখা সেখানেই বেশি করে পার্কিং করা হচ্ছে। ট্রাক্টর, ট্রাক চলাচলেও নেই নিয়ম। দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে।’

হোটেল ব্যবসায়ী তারেক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সড়কজুড়ে এমন অবস্থা, হেঁটেও রাস্তা পার হওয়া যায় না। নিয়ম-নীতির বালাই নেই।’

শহরজুড়ে ব্যাটারিচালিত টমটমের আধিপত্য রয়েছে বেশ। তবে চলাচলে নেই কোনো শৃঙ্খলা। সড়কে পাশাপাশি দুই-তিন লাইনে চলাচল করছে। এতে যানজট যেমন বাড়ছে, তেমনি ঘটছে দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেল, টমটম ছাড়াও পৌর শহরের সবকটি প্রধান সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে বিআরটিসি ও শান্তি পরিবহনের বাস। থাকছে পণ্যবাহী ও অন্যান্য যানবাহন। চলছে অনুমোদনহীন ট্রাক্টরও। এসব গাড়ি চালকের অনেকে অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ অবস্থায় রীতিমতো বিরক্ত সড়কের পাশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও।

শিক্ষার্থীরা জানান, ফুটপাত ধরে হাঁটাও যায় না। সড়কে বেপরোয়া চলাচল করে টমটম, মোটরসাইকেল, চাঁদের গাড়িসহ পর্যটকবাহী বিভিন্ন পরিবহন। দুর্ঘটনার কবলে পড়ার ঝুঁকি থাকায় অনেকে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় না।

সড়কজুড়ে চরম এ অব্যবস্থাপনার জন্য তদারকির অভাবকে দুষছেন খাগড়াছড়ি জেলা শিল্পকলার সাধারণ সম্পাদক জীতেন বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘শহরটাকে দেখার যেন কেউ-ই নেই। যে যার খেয়ালমতো সড়ক ও ফুটপাত দখল করছে।’

ট্রাফিক বিভাগ বলছে, প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলেও থামানো যাচ্ছে না যত্রতত্র পার্কিং। শহরের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নেই। শুধু মামলা বা অভিযান চালিয়ে এসব রোধ করা যাবে না। অংশীজনদেরও সহায়তা করতে হবে। তবেই ভোগান্তি রোধ সম্ভব হবে বলে মনে করেন খাগড়াছড়ি ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর সুপ্রিয় দেব।

যত্রতত্র পার্কিং ও যানজটের জন্য ট্রাফিক বিভাগের জনবল সংকটকে দুষছেন খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোসহ পার্কিং ও দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হবে। এজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। কমিউনিটি পুলিশিও কাজে লাগানো যেতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন