নাটোরে পাহারা বসিয়েও বন্ধ হচ্ছে না ট্রান্সফরমার ও সেচ পাম্প চুরি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নাটোর

নাটোরে ট্রান্সফরমার ও সেচ পাম্প চুরির কারণে ব্যাহত হচ্ছে সেচকাজ ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

সপ্তাহ খানেক পর কৃষকের ঘরে উঠবে বোরো ধান। এমন সময় নাটোরের সিংড়ায় বেড়েছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও সেচ পাম্প চুরি। পল্লী বিদ্যুতের হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে চলনবিল অঞ্চলে কৃষকের ১৮টি ট্রান্সফরমার ও শতাধিক সেচ পাম্প চুরি হয়েছে। চুরি ঠেকাতে সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সাধারণ মানুষ রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে। তাতেও চুরি রোধ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় চিরকুট লিখে বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটছে। সেই মিটার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।

তবে ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, চুরি সংঘটিত হওয়ার সময়ই লোডশেডিং করা হচ্ছে। এজন্য দিন দিন চোরের উপদ্রবও বাড়ছে। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ছাড়া খুঁটি থেকে এভাবে ট্রান্সফরমার চুরি সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সিংড়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরির অভিযোগ পেলেই থানায় জানানো হচ্ছে। একটি চক্র চুরির সঙ্গে জড়িত। তারা পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের চেয়েও দক্ষ।’ চুরি রোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সিংড়া জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল রাতে উপজেলার কয়ড়াবাড়ি ও বিলতাজপুর বিলের পাশাপাশি চারটি খুঁটি থেকে ৫০ কেভির পাঁচটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে কৃষক শফিকুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, জামাল উদ্দিন, আলেয়া বেগম, মাওলানা অজিদ, জিল্লুর রহমান ও আবেদ আলীর বোরো জমিতে সেচ বন্ধ হয়ে গেছে। একই রাতে উপজেলার কালীগঞ্জের গোয়ালবাড়িয়া বিল থেকে আরো একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

এছাড়া মার্চের শেষে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাতপুকুরিয়া ও তাজপুর বিল থেকে দুই দফায় আটটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। পরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাত জেগে পাহারা বসানো হয়। এর মধ্যেও ৩ এপ্রিল রাতে সাতপুকুরিয়া বিল থেকে ১৫ কেভির একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। সম্প্রতি উত্তর দমদমা কাঁটাজোলা ব্রিজের পাশ থেকে এক রাতে আরো তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার ছাড়াও গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন বিল থেকে শতাধিক সেচ পাম্প ও ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন চুরির ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষক জানান, ১১ এপ্রিল রাতে উপজেলার হাড়োবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নানের এলএলপির নলকূপের মিটার চুরি হয়ে গেছে। চিরকুটে লেখা বিকাশ নম্বরে টাকা দিয়েও তিনি মিটার ফেরত পাননি। এছাড়া নিংগইন গ্রামের একটি গভীর নলকূপের মিটার একই কায়দায় চুরি হয়েছে। পরে বিকাশে চাহিদামতো টাকা দিয়েও মিটার ফেতর পাওয়া যায়নি।

সাতপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অন্যের কাছ থেকে ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেছি। সেচ পাম্পটি চুরি গেছে। ফসল বাঁচাতে ঋণ করে আবার সেচ পাম্প বসিয়েছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সিংড়া উপজেলায় ৩৬ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। হঠাৎ ট্রান্সফরমার ও সেচ পাম্প চুরি বেড়ে যাওয়ায় সেচকার্য ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন চোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া চুরি রোধ সম্ভব নয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন