ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা

হামলার পরও দাম বাড়েনি জ্বালানি তেলের

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলের ওপর ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার পরও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়েনি। উল্টো গতকাল প্রায় সব বাজার আদর্শেই সামান্য দাম কমেছে পণ্যটির। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় মে মাসে সরবরাহের জন্য (ফ্রন্ট মান্থ কন্ট্রাক্ট) অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম নেমে এসেছিল প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার ৫ সেন্টে। যদিও আগের দিন এ চুক্তিতে পণ্যটির বাজার স্থির হয়েছিল ৮৫ ডলার ৩৪ সেন্ট। একই সময় ফ্রন্ট মান্থ কন্ট্রাক্টে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলার ২৩ সেন্ট থেকে নেমে আসে ৮৯ ডলার ৮৪ সেন্টে। 

এর আগে গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ছয় মাসে সর্বোচ্চে। সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে পণ্যটির সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা করছিলেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বালানি পণ্য সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক আশঙ্কা তৈরি হয়। ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যবর্তী এ প্রণালিকে বলা হয় বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের ধমনী। ওপেকভুক্ত দেশ সৌদি আরব, ইরান, আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এ পথ দিয়েই জ্বালানি তেল রফতানি করে। পণ্যটির  মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই এ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত হয়। 

যদিও ইরান ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর গতকাল বাজারে জ্বালানি তেলের দাম না বেড়ে উল্টো কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি পণ্যে বিনিয়োগ নিয়ে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলার তীব্রতা কম হওয়ার পাশাপাশি এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় এ সংঘাত আরো বড় কোনো দিকে মোড় নেবে না বলেও প্রত্যাশা করছেন তাদের অনেকেই। তাদের এ সতর্কতা ও প্রত্যাশারই ছাপ দেখা যাচ্ছে জ্বালানি তেলের বাজার দরে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বাজার আদর্শ মারবান ক্রুড ও দুবাই ক্রুডের দামেও গতকাল দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। আগের দিনের ৯০ ডলার ২৪ সেন্ট থেকে কমে গতকাল প্রতি ব্যারেল মারবান ক্রুডের দাম নেমে এসেছিল প্রতি ব্যারেল ৮৯ ডলার ৭৯ সেন্টে। 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাজারে এ নিম্নমুখী প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আগামী কিছুদিন বাজারে পণ্যটিতে বিনিয়োগের বিষয়ে বেশ সতর্ক মনোভাব প্রদর্শন করতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।  

এর আগে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলে দাম উঠে গিয়েছিল ১২৫ ডলারে। পশ্চিমা দেশগুলো জ্বালানি তেল রফতানিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ রাশিয়ার ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। 

বৈশ্বিক জ্বালানি তেল বাজারে বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে ইরানেরও। দেশটি এখন দৈনিক গড়ে ৩০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করছে। বর্তমানে এদিক দিয়ে ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান চতুর্থ আর গোটা বিশ্বে সপ্তম। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন