গ্রীষ্মের শুরুতেই তীব্র তাপপ্রবাহ রূপ নিতে পারে অতি তীব্রে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

গ্রীষ্মের শুরুতে তথা বৈশাখের দ্বিতীয় দিনেই গোটা দেশেই হাঁসফাঁস অবস্থা। অস্বস্তি বাড়াচ্ছে আর্দ্রতা। কয়েকদিন আগেই বিভিন্ন অঞ্চলে জারি করা হয়েছে হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের সতর্কতা। এ আবহে গত দুই দিন তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি, আবহাওয়ার পরিভাষায় যাকে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, গ্রীষ্মের এ দাবদাহ আগামী কয়েকদিনে অতি তীব্রতে রূপ নিতে পারে।

দেশের প্রায় সব জেলার ওপর দিয়েই মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড করছে তাপমাত্রা। সে ধারাবাহিকতায় গতকালও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল দিনের তাপমাত্রা সব থেকে বেশি ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিওএমও) মতে, কোনো জায়গার দৈনিক যে গড় তাপমাত্রা সেটি পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে গেলে এবং পরপর পাঁচদিন তা চলমান থাকলে তাকে হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ বলা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের হিসাব অনুযায়ী তাপপ্রবাহকে চার ভাগে ভাগ করে। কোনো স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা যখন ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, তাকে বলে মাঝারি তাপপ্রবাহ। ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে সেটিকে বলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়ায় গতকাল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সমুদ্রবেষ্টিত অঞ্চলটিতে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববারও খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ওইদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটিতে, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

এদিকে রাজধানীর তাপমাত্রাও কিছুটা বেড়েছে। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সন্ধ্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বর্তমানে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে আজ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের দু-এক জায়গায় সামান্য বৃষ্টির আভাস রয়েছে।

তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে কালবৈশাখী ঝড়ের আভাস দেয়া হলেও চলমান তাপপ্রবাহ এখনই কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমনকি এপ্রিলজুড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও কম। তাই সারা দেশের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘একমাত্র ময়মনসিংহ ও রংপুরের কয়েক জেলা বাদ দিয়ে সারা দেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সামনে দিনগুলোয় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বা সামান্য বাড়তে পারে। কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে মঙ্গলবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের দু-এক জায়গায় সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যে জায়গায় বৃষ্টি হবে সেখানে কেবল তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।’

আগামীকালের পূর্বাভাসেও রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং তা অন্যত্র প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া আগামী পাঁচদিনের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে কড়া রোদ, উষ্ণ বাতাস আর তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারা দেশের জনজীবন। বিশেষ করে যারা জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা আছেন সবচেয়ে বিপাকে। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে রোদ-গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন