বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মার্কিন প্রভাবকে ক্ষুণ্ন করতে পারে মূল্যস্ফীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মার্কিন প্রবৃদ্ধি। তবে এ প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি। পাশাপাশি বৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত সুদহার নীতি তৈরি করতে পারে বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন অধিবেশনকে সামনে রেখে এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।

ওয়াশিংটনে রোববার শুরু হয়েছে বৈশ্বিক দুই বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বসন্তকালীন অধিবেশন, শেষ হবে ২০ এপ্রিল। অর্থনীতিবিদরা মনে করেছেন, এবারের অধিবেশনে প্রাধান্য পেতে যাচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। বিশেষ করে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শ্রম সরবরাহ ও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনায় থাকবে।

শিকাগো ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট অস্টান গোলসবি মনে করেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা নিশ্চিতে মধ্যবর্তী একটি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অবশ্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিনিময় হার ও ট্রেড চ্যানেলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি দেশও এ নীতি গ্রহণের চেষ্টা করেছে। এরই মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এসব নীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত জানানোর আগে বিশ্লেষকরা ফেডের সিদ্ধান্তের দিকে চোখ রাখার পক্ষে। যদিও ফেড মনে করে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা চাহিদা এখনো খুব বেশি। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সুদহার কমানোর বিষয়টি পিছিয়ে দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ যা হতে পারে, তা হলো সুদহার বৃদ্ধি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর যেকোনো একটির প্রভাব হবে নেতিবাচক। সাম্প্রতিক প্রাপ্ত তথ্যও খুব একটা অনুকূল না। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশিত ২ শতাংশের চেয়েও বেশি ছিল। জানুয়ারি-মার্চ সময়ের প্রবৃদ্ধির হারও আশানুরূপ ছিল না। কখন সুদহার কমাতে হবে তা নিয়ে ফেড কর্মকর্তারা এখনো দ্বিধাবিভক্ত। গত সপ্তাহে ফেডের রিচমন্ডের প্রেসিডেন্ট থমাস বারকিন বলেছেন, ‘আমরা এখনো মূল্যস্ফীতিকে প্রত্যাশিত মাত্রায় নামিয়ে আনতে পারিনি।’ 

ফেডের কর্মকর্তারা গত বছর থেকেই জানিয়ে আসছেন, ২০২৪ সালে সুদহার কমানো হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চে ৩ লাখ ৩ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। ফলে কর্মসংস্থানের প্রতিবেদন ও মূল্যস্ফীতির হার বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সূত্র ধরে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত অনিশ্চিত হয়ে দেখা দিয়েছে।

সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পার জ্যানসন জানান, ফেডের আগামী বৈঠকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সারা বছরের অর্থনৈতিক নীতিমালা কেমন হবে, তা জড়িত। এর আগে ফেডের বৈঠকে কেউ কেউ বলেছিলেন, মুদ্রানীতি ততটা কঠোর হবে না। খুব সম্ভবত এমন উক্তি পরবর্তী সময়ে চাহিদা বৃদ্ধি ও সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, দেশটির অভিবাসী বৃদ্ধি ও শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কারণে প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। ফেড কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন উভয় কারণেই দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে আনার গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। যদি অর্থনীতি শক্তিশালী থাকে কিংবা মুদ্রানীতি শিথিল করা হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যেভাবে বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে; ঠিক সেভাবেই নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যারেন ডিনান বলেন, ‘ফেড এ মুহূর্তে দেখা ও অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমি মনে করি না।’ ডিনান মনে করেন, যদি মূল্যস্ফীতি থাকে, তাহলে তার ফলাফল অগ্রাহ্য করা সম্ভব হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন