ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: কী হতে যাচ্ছে?

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাস প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাবে শনিবার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রতিশোধমূলক হামলায় তেহরান। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কমপক্ষে ৩০০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তেহরান। বহুদিনের বৈরিতা থাকলেও এবারই প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালাল দেশটি। এর আগে কয়েক দশক ধরে ছায়াযুদ্ধ লেগে থাকলেও কোনো পক্ষই অন্য পক্ষের ভূখণ্ডে সরাসরি আক্রমণ চালায়নি।

ইরানের আক্রমণের জবাবে ইসরায়েল দেশটির বিরুদ্ধে পরবর্তী সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় কিনা সেদিকেই এখন সকলের দৃষ্টি। যদিও পাল্টা হামলার জবাবে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন ইনস্টিটিউট অফ পিসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কেন্দ্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোনা ইয়াকুবিয়ান বলছিলেন, দামেস্কে হামলার জন্য প্রকাশ্যে প্রতিশোধ নেওয়া এবং আরো বিস্তৃত সংঘাত এড়ানোর মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে ইরান।

তিনি আরো  বলেন, যেহেতু হামলায় কোনো ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়নি এবং অধিকাংশ আক্রমণই প্রতিহত করতে পেরেছে সে কারণে বিজয় দাবি করতেই পারে ইসরায়েল। একইসঙ্গে দামেস্কে হামলার জবাবে প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে হামলা করাও ইরানও বিজয় দাবি করতে পারে।

তবুও রোববার (১৪ এপ্রিল) ইসরায়েলে ওয়ার ক্যাবিনেটের বৈঠকের ফলাফলের জন্য বিশ্ববাসী অপেক্ষা করছিল। কারণ ইসরায়েলি কট্টরপন্থীরা পাল্টা হামলার জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল। যদিও উদারপন্থীরা সংযমের পরামর্শ দিয়েছে।

ওয়ার ক্যাবিনেটের সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, আমরা একটি আঞ্চলিক জোট গড়ে তুলব। হামলার প্রেক্ষিতে ইরানকে যাতে মূল্য দিতে হয় তা নিশ্চিত করব।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলার মাধ্যমে  ইরান একটি বার্তা দিয়েছে। যার মোদ্দা কথা হলো ইসরায়েলের সঙ্গে বৈরিতা শুধু ছায়াযুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকবে বিষয়টি এমন নয়।

সুইডিশ ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির কৌশলগত উপদেষ্টা ম্যাগনাস র‌্যানস্টর্প বলেন, এটি একটি সতর্কতামূলক আক্রমণ। ইরান মূলত বলতে চেয়েছে যে ইসরায়েল যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে পরিণতি খারাপ হতে পারে।

তবে ইরান বলেছে, তারা পুরো অঞ্চল জুড়ে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাইয়ান এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে জানান,   ইরানের এই মুহূর্তে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই, যদি না ইসরায়েল ইরানে পাল্টা আক্রমণ করে।

ইসরায়েলে সম্প্রতি হামলা চালানোর ঘটনায় ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তারা দামেস্ক হামলায় জড়িত ইসরায়েলি স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। বেসামরিক ব্যক্তি বা অর্থনৈতিক এলাকা আক্রমণ করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না এবং তারা সেটি করেওনি।

কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের পরিচালক মাহা ইয়াহি বলছিলেন, হামলা বিষয়ে ইরান আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিল। এবং তেহরান জানত তাদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলে পৌঁছানোর আগেই প্রতিহত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ নিয়ে  ক্রমবর্ধমান চাপ এখন আঞ্চলিক উত্তেজনায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

ইসরায়েলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষণা কার্যক্রমের পরিচালক এলদাদ শাভিত বলেন, ইরানের হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের পাল্টা সামরিক পদক্ষেপ নিকএমনটা চায় না যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।

এছাড়া হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি এনবিসিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক সংঘর্ষ বা বৃহত্তর যুদ্ধ চান না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এর কূটনৈতিক দিক নিয়ে কাজ করছেন।

ইসরায়েলে ইরানের হামলার বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক হয়।  নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান স্পষ্ট বলেছে, তারা এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই শুরু করতে চায় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরান এবং তার জনগণের ওপর সামরিক হামলা শুরু করে, তাহলে তেহরান ন্যায্যভাবে আত্মরক্ষা করবে। খবর এপি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন