প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন আত্মঘাতমূলক নৈরাজ্য বাড়াবে —টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪-এর কয়েকটি ধারায় শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ কমানোর উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে টিআইবি। এতে বলা হয়েছে, তরুণ শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ প্রণীত হওয়ার পর তার কার্যকর বাস্তবায়ন দূরে থাক, সড়কে বিশৃঙ্খলা, অনাচার ও নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে।

টিআইবি মনে করে, জনস্বার্থবিবর্জিত প্রস্তাবিত সংশোধনীর ফলে আইনটি তার উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে আরো দুর্বল হয়ে পড়বে এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষের হাতে সড়ক ব্যবস্থাপনার জিম্মিদশা আরো বাড়বে।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আইনের অন্তত ১২টি ধারায় পরিবর্তন এনে এবং অধিকাংশ ধারায় চালক ও সহকারীদের জেল-জরিমানা ও শাস্তি কমিয়ে সড়ক পরিবহন সংশোধন আইন, ২০২৪-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনের ৬৯, ৭০, ৮১, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৯০, ৯৮, ১০৫ ধারায় শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে।

তবে সড়ক পরিবহন আইন, ২০২৪-এ যানবাহনের বীমা বাধ্যতামূলক করা [ধারা ৬০ (২)], সুপারভাইজার সংযুক্ত করা [ধারা ৭১] ও গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন অথবা নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত দাবি বা আদায়সংক্রান্ত ধারা লঙ্ঘনের দণ্ড আলাদাভাবে যুক্ত করা [ধারা ৮০] হয়েছে। এ তিন সংশোধনীর সঙ্গে টিআইবির গবেষণালব্ধ সুপারিশের সামঞ্জস্য থাকায় সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‌সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা এনে তা জনগণের জন্য নিরাপদ করে তুলতে যেখানে জরিমানা ও শাস্তির বিধান যৌক্তিকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, সেখানে সংশোধনীর মাধ্যমে শাস্তি কমিয়ে দেয়া হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়বে এবং জনগণের জন্য আরো বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে চালক-শ্রমিকের আইন না মানার প্রবণতার পাশাপাশি সড়কে অনিয়মও উৎসাহিত করবে। সড়ক নিরাপদ করে তুলতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও অবস্থাদৃষ্টে সরকারের অবস্থান ঠিক তার উল্টো দিকে বলে প্রতীয়মান হয়। এমন সংশোধনের ফলে সড়কে অনিয়ম-দুর্নীতি, নৈরাজ্য আরো বাড়ার ঝুঁকি যেমন সৃষ্টি হবে, তেমনি সড়ক-মহাসড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত মর্মান্তিক মৃত্যুর মিছিল কেবল দীর্ঘ হবে।’

টিআইবির সাম্প্রতিক গবেষণায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকপক্ষের হাতে সড়ক ব্যবস্থাপনার জিম্মি দশার প্রকটতা উঠে আসে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‌‌সড়ক আইন সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তি ও জরিমানা কমিয়ে আনা এ জিম্মি দশার সঙ্গে সম্পর্কিত। আইনে সংশোধন এনে শাস্তি কমানোর পেছনে সরকারের ওপর রাজনৈতিক মদদপুষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রভাব রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এ সংশোধনী সংসদে গৃহীত হলে জনগণের স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হবে। এ আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

সংশোধন প্রক্রিয়ার কোনো ধাপেই প্রস্তাবিত সংশোধনীর খসড়া খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য উন্মুক্ত না করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। টিআইবি মনে করে, সড়কে জনগণের চাহিদা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরিপ্রেক্ষিতে যাদের শৃঙ্খলায় আনতে আইনটি তৈরি করা হয়েছে, তাদের চাপ ও স্বার্থে আইন সংশোধন করা হলে আইনের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। একই সঙ্গে যে উদ্দেশ্যে আইন করা হয়েছিল তা থেকে সরে দাঁড়ানো হবে। এ অবস্থায় খসড়া আইন চূড়ান্তের আগে বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন