হাইপোগ্লাইসেমিয়া হাইপারগ্লাইসেমিয়া

ঘন ঘন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে স্মরণশক্তি লোপ পায়

ডা. শাহজাদা সেলিম

যদি কোনো কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ খুব কমে যায়, অর্থাৎ ৩.০ মিলিমোল/লিটারের কম হয় তাহলে শরীরে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। একে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে, যা জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যাদের রক্তে গ্লুকোজ সবসময়ই বেশি থাকে, তাদের অনেক সময় রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ৫, ৬, ৭, ৮ বা আরো বেশি থাকলেও হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে থাকে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলো হলো ঘাম হওয়া, শরীর কাঁপতে থাকা, মাথা ধরা, ঝাপসা দেখা, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হওয়া, বেশি খিদে পাওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ করা ও বুক ধড়ফড় করা।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে যা করা উচিত

  প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ামাত্রই রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা।

  চা চামচের ৩ থেকে ৬ চামচ গ্লুকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলিয়ে খাইয়ে দিতে হবে।

  রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইনজেকশন দিতে হবে বা তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব    হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

  অবিলম্বে চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর বিপদসংকেত

  শ্বাস-প্রশ্বাসে অ্যাসিটোনের উপস্থিতি (কিটো অ্যাসিডোসিস) নিশ্বাসে মিষ্টি গন্ধ।

  খুব দুর্বল বোধ করা ও ওজন দ্রুত কমতে থাকা।

  পায়ের আঙুলের কোথাও কালো দাগ পড়া ও অবশ বোধ করা।

  প্রস্রাবের পরিমাণ বা হার কমে যাওয়া।

  চশমার পাওয়ার ঘন ঘন পাল্টানো।

  ত্বকে ঘন ঘন জীবাণুঘটিত অসুখ হলে ও ওষুধ গ্রহণে সহজে নিরাময় না হলে।

  বুক ধড়ফড় করা, গা ঘামতে থাকা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)।

হাইপারগ্লাইসেমিয়া

রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা সুগার শরীরের অধিকাংশ কোষে কিছু বিশেষ ধরনের পরিবর্তন ঘটায়। যার জন্য এ কোষগুলো নিজেদের কাজকর্ম ঠিকমতো করতে পারে না। ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি সাধিত হয়, যার অধিকাংশই পরে আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। কিছুদিন রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে যে পরিবর্তন শুরু হয় তার কুফল হাতেনাতে পাওয়া না গেলেও দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয় কিছুদিন পরেই। আমরা একাধারে এর নাম করছি।

ছোট রক্তনালি ও স্নায়ুতে ডায়াবেটিসজনিত যেসব জটিলতা দেখা দেয় সেগুলো হলো রেটিনোপ্যাথি, ক্যাটার‍্যাক্ট বা চোখের ছানি (দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া), নেফ্রোপ্যাথি (কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা রেনাল ফেইলিউর), পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি (হাত-পায়ের অনুভূতি কমে যাওয়া), অটোনমিক নিউরাপ্যাথি (হঠাৎ দাঁড়ালে রক্তচাপ কমে যাওয়া, পাকস্থলী ও আন্ত্রিক সমস্যা), পায়ের সমস্যা (আলসার বা ঘা হওয়া, পায়ের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হওয়া)। 

বড় রক্তনালিতে ডায়াবেটিসজনিত যেসব জটিলতা দেখা দেয় সেগুলোর মধ্যে হলো হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহে সমস্যা (এমআই/অ্যাজিনা), মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা (টিআইএ/স্ট্রোক), পায়ে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা (পঙ্গু হওয়া)।

ডায়াবেটিক রোগীর মৃত্যুর কারণ

 হৃদ ও রক্তনালির রোগ - ৭০ শতাংশ                                                            

 রেনাল ফেইলিউর - ১০ শতাংশ                                                                                

 ক্যান্সার - ১০ শতাংশ                                                                                     

 জীবাণু সংক্রমণ  - ১০ শতাংশ 

 হাইপারগ্লাইসেমিয়াজনিত জটিলতা - ১ শতাংশ                                                               

 অন্যান্য - ৩ শতাংশ                                                                                          

ডায়াবেটিক রোগীর মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো হলো ডায়াবেটিসের স্থায়িত্ব, কম বয়সে ডায়াবেটিসের শুরু, উচ্চমাত্রার গ্লাইসিলেটেড হিমোগ্লোবিন, উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে প্রোটিন, দৈহিক স্থূলতা, রক্তে লিপিড বা কোলেস্টেরলের অতিরিক্ত মাত্রা।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন