পেপটিক আলসার

পেপটিক আলসার কী প্রতিরোধে যা প্রয়োজন

অধ্যাপক ডা. মিয়া মাশহুদ আহমদ

ছবি : বণিক বার্তা

পেপটিক আলসার ডিজিজ পরিপাকতন্ত্রের একটি পরিচিত রোগ। এ রোগে পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে ঘা বা ক্ষত দেখা দেয়। উপসর্গ হিসেবে পেট ফোলা ভাব, পেটে জ্বালাপোড়া ও তীব্র ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকা, অনিয়ন্ত্রিত বাত অথবা ব্যথার ওষুধ এবং পাকস্থলীতে উৎপাদিত অতিরিক্ত অ্যাসিডের ক্ষতিকর প্রভাব এবং জীবাণুর সংক্রমণ এ রোগের প্রধান কারণ। পেপটিক আলসারের রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ আলসারের লক্ষণ দেখা দিলেও ফার্মেসি থেকে নিজের সিদ্ধান্তে প্রচলিত ওষুধ কিনে খায়। এসব ওষুধে রোগ নিরাময় হয় না। উল্টো দীর্ঘমেয়াদে ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব বাড়িয়ে তোলে আরো নানাবিধ শারীরিক জটিলতা।

পেপটিক আলসার

পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষত বা প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এর ফলে পেটে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। যেমন পেটে জ্বালাপোড়া, অসহনীয় ব্যথা ও পেট ফুলে থাকা। প্রধানত হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ পেপটিক আলসারের জন্য দায়ী। এ ব্যাকটেরিয়া দূষিত খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং পাকস্থলীতে ঘা ও প্রদাহের সৃষ্টি করে। পাকস্থলীর এ অবস্থাকে বলা হয় পেপটিক আলসার। 

পেপটিক আলসারের কারণ

সাধারণত দুটি কারণে পেপটিক আলসার হতে পারে—

১. হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।

২. এনএসএআইডিএস-জাতীয় ব্যথার ওষুধ সেবন।

এছাড়া নিম্নোক্ত কারণে পেপটিক আলসার হতে পারে:

নিদ্রাহীনতা, ধূমপান ও মদ্যপান

বংশগত কারণ ও জন্মগতভাবে পরিপাকতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল হওয়া

দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ

তেল-চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া

পেপটিক আলসারের উপসর্গ

পেটে জ্বালাপোড়া, অসহনীয় ব্যথা ও পেট ফুলে থাকা

বুকে ব্যথা ও জ্বালা করা

অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ক্ষুধামান্দ্য

অতিরিক্ত ঢেকুর ওঠা এবং খাবার গিলতে সমস্যা

বমি ভাব বা বমি

দ্রুত ওজন হ্রাস

মলের সঙ্গে রক্তপাত এবং মলের রঙ খয়েরি বা কালো হওয়া

পেপটিক আলসারের জটিলতা

দীর্ঘদিন ধরে পেপটিক আলসারের চিকিৎসা না হলে ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে, হতে পারে ছিদ্র। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

পেপটিক আলসারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রোগ নির্ণয়ে ইউরিয়া ব্রেদ পরীক্ষা, রক্তের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা (অ্যান্টি-এইচ পাইলোরি আই জি), স্টুল অ্যান্টিজেন ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। কখনো কখনো এটি শনাক্ত করতে এন্ডোস্কোপি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে কোথায়, কোন অংশে, কতটুকু জায়গাজুড়ে আলসার হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বোঝা যায়।

পেপটিক আলসারের চিকিৎসা

পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় প্রথমে রোগের কারণ জানা জরুরি। যদি পাকস্থলীতে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকে, তবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধে রোগ নিরাময় হবে না। এ ক্ষেত্রে এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে। যদি এইচ পাইলোরির সংক্রমণ না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড নিঃসরণ রোধকারী ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকবেন না।

ভাজাপোড়া ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

রাতের খাবার আটটার মধ্যেই খেয়ে নিন। রাতে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন।

খাওয়ার পর পরই বিছানায় শুয়ে পড়বেন না। কিচ্ছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন।

মাদক সেবন ও ধূমপান পরিহার করুন।

প্রতিদিন কিছু তাজা ফল, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।


লেখক: মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন