মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে জ্বালানি তেলের বাজার ফের অস্থিতিশীল

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের প্রভাবে ফের অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জ্বালানিটির ব্যারেলপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। সবশেষ শুক্রবারও মূল্যবৃদ্ধির ধারায় ছিল বাজার। খবর রয়টার্স।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ জ্বালানি তেল সরবরাহকারী অঞ্চল। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের অভিঘাতে গত বছরের অক্টোবর থেকেই অঞ্চলটি থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। তার ওপর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে লোহিত সাগরে পশ্চিমা দেশগুলোর সংঘাত জ্বালানিটির সরবরাহকে আরো বেশি চাপের মুখে ফেলেছে। বুধবার ইসরায়েল হামাসের দেয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে এ অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ফলে বাড়তে শুরু করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।

আইসিই ফিউচারস ইউরোপে শুক্রবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের সরবরাহ চুক্তির মূল্য ৫৬ সেন্ট বা দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮২ ডলার ১৯ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ৬২ সেন্ট বা দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৭৬ ডলার ৮৪ সেন্টে উন্নীত হয়েছে। 

বিশ্লেষকরা জানান, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে বাস্তবতাবিবর্জিত উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহত বেড়েছে। অথচ এর আগের সপ্তাহে পণ্যটির দাম ৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। 

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত জ্বালানি পণ্যের সরবরাহ ঘাটতিও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে সহায়তা করছে। চলতি সপ্তাহের এখন পর্যন্ত গ্যাসোলিনের সরবরাহ চুক্তির দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি গ্যালনের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ ডলার ৩৪ সেন্টে। একই সময় হিটিং জ্বালানির সরবরাহ চুক্তিমূল্য ১১ শতাংশ বেড়ে গ্যালনপ্রতি ২ ডলার ৯৬ সেন্টে পৌঁছেছে।  

২০২৩ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির গতি ছিল অনেক ধীর। চলতি বছর এ গতি আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ফিরে যেতে পারে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী-পূর্ব ধারায়। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) এমনটা জানিয়েছে। 

প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি সম্প্রতি জ্বালানি তেলের বাজারসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, গত বছর প্রতিদিন ২৩ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছিল। এ বছর বাড়বে ১২ লাখ ব্যারেল করে। মোট দৈনিক চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেলে। 

চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে আইইএর বিশ্লেষকরা জানান, কভিড-১৯ সংক্রান্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ার পর চীনে ভ্রমণের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। তবে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে এসে তা লক্ষণীয় মাত্রায় কমে যায়। ফলে পরিবহন খাতে জ্বালানি পণ্যের ব্যবহারেও ভাটা পড়ে, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে। 

চীন বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী। এ বছর পণ্যটির চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে দেশটি প্রায় ৬০ শতাংশ অবদান রাখবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা। এক্ষেত্রে সহায়তা করবে দেশটির পেট্রোকেমিক্যাল খাতের সম্প্রসারণ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন