সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ

সিওপিডি আক্রান্ত রোগীরা ভালো থাকবেন যেভাবে

অধ্যাপক ডা. মো. সাইদুল ইসলাম

বিশ্বজুড়ে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে মৃত্যুহারও। ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে মোট মৃত্যুর তৃতীয় কারণ এটি। সে বছর ৩২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। রোগটি পূর্ণ নিরাময় হয় না। তবে সচেতন জীবনযাপনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যারা এ রোগে ভুগছে তাদের নিম্নোক্ত নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি—

নিজের যত্ন নিন

সিওপিডি আক্রান্ত রোগীদের নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় তাদের মাথায় রাখতে হবে। যেমন—

যথানিয়মে ওষুধ সেবন: শ্বাসযন্ত্রজনিত জটিলতা যেন বেড়ে না যায় সেজন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে। 

ধূমপান পরিহার: সিওপিডি আক্রান্ত রোগীদের জন্য ধূমপান রীতিমতো প্রাণঘাতী বিষতুল্য। ফলে ধূমপানের অভ্যাস থাকলে দ্রুত তা পরিহার করতে হবে। পরোক্ষ ধূমপানও এড়িয়ে চলা জরুরি। এমনকি আবদ্ধ রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকেও নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।  

নিয়মিত শরীরচর্চা: নিয়মিত শরীরচর্চা যেমন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়, তেমনই দৈনন্দিন জীবনমানও উন্নত করে। সিওপিডির নানামুখী জটিলতা উপশমে এটি দারুণ কার্যকর। 

শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম: নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে ফুসফুস ভালো থাকে। বিশেষ করে যারা সিওপিডিতে ভুগছেন তাদের জন্য এ ধরনের ব্যায়াম খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছ থেকে নিয়ম জেনে রিলাক্সিং ব্রিদিং, শ্বাস গোনার ব্যায়াম বা বেলো ব্রিদিংয়ের মতো যেকোনো ব্যায়াম অনুশীলন করতে পারেন।  

ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত দৈহিক ওজন সিওপিডি রোগীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ প্রভৃতির মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। 

লক্ষ রাখুন আবহাওয়া: আবহাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়, অতিরিক্ত গরম বা শীতের দিনগুলো সিওপিডি রোগীদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আবার হেমন্তকালে বাতাসে প্রচুর ধুলোবালি থাকে। এই সময়টাও খুব ক্ষতিকর। তাই বাইরে বের হতে হলে আবহাওয়ার অবস্থা বিবেচনায় রাখুন। হুট করে গরম বা ঠাণ্ডা থেকে জটিলতা বাড়িয়ে তুলবেন না। 

ভ্যাকসিন নিন: সিওপিডি আপনার দেহে জটিল প্রভাব ফেলতে পারে। সিওপিডির মাত্রাতিরিক্ত আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষার প্রতিষেধক টিকা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। এজন্য প্রতি বছর একবার ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন এবং সারা জীবনের জন্য একবার নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নেয়া নিরাপদ।

যা এড়িয়ে চলবেন 

সিওপিডি আক্রান্ত রোগীদের সচেতনভাবেই কিছু বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন—

ধুলোবালিপূর্ণ নোংরা পরিবেশ। 

যেকোনো ধরনের ধোঁয়া। যেমন রান্নার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া বা শিল্প-কারখানার ধোঁয়া। 

এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে, হেয়ার স্প্রে। 

তীব্র গন্ধযুক্ত পরিষ্কারক পণ্য। 

মানহীন পারফিউম। 

লেখক: অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন