এমপক্স

লক্ষণ ও উপসর্গ...

অধ্যাপক ডা. সমীরণ কুমার সাহা

ছবি : বণিক বার্তা

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের নাম এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স। করোনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি মহামারীর আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভাইরাসটির সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমাদের দেশেও সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমনী চ্যানেলে সার্বক্ষণিক একটি চিকিৎসক দল নিয়োজিত রয়েছে।

এমপক্স কী: এমপক্স হলো প্রাণীবাহিত ভাইরাসজনিত সংক্রামক ব্যাধি। ১৯৫৮ সালে কঙ্গোয় বানরের দেহে এ ভাইরাস প্রথমবার শনাক্ত হয়, তাই এমন নামকরণ। তবে শুধু বানর নয়, ভাইরাসটি ছড়াতে পারে ইঁদুর, বন্য কুকুর, কাঠবিড়ালি ও খরগোশের শরীর থেকেও। তীব্র জ্বরের মাধ্যমে শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি প্রকাশ পেতে শুরু করে। তীব্র ছোঁয়াচে হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা অন্যদের মধ্যেও এ ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হয়।

এমপক্সের লক্ষণ ও উপসর্গ: ভাইরাস সংক্রমণের পর সাধারণত ৩ থেকে ১৭ দিনের মধ্যেই লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণগুলো হলো—

• জ্বর ও মাথাব্যথা

• ত্বকে পানিভর্তি ফোসকা

• ফোসকায় ব্যথা ও চুলকানি

• মাংসপেশিতে ব্যথা

• পিঠে ব্যথা

• লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া

• গলাব্যথা ও কাশি

• দুর্বলতা

এগুলো সাধারণত দুই-চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো নয়, তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এ সময় ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

যেভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে। এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

সঙ্গী এমপক্সে আক্রান্ত হলে, যৌনমিলনের মাধ্যমে অন্যজন সংক্রমিত হতে পারে।

সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুই অন্য কেউ ব্যবহার করলে।

গর্ভবর্তী মা এতে আক্রান্ত হলে, গর্ভের সন্তান সংক্রমিত হতে পারে।

• এমপক্সে আক্রান্ত বন্যপ্রাণীর মাংস ও তেল কম আঁচে রান্না করে খেলে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে

• নবজাতক শিশু

• গর্ভবতী নারী

• দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি। যেমন কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি। 

প্রতিরোধে করণীয়

আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিকটজনের কেউ আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সাবান, জীবাণুনাশক বা ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিন। 

হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

বাইরে মাস্ক পরিধান করুন এবং ঘরে ফিরেই ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন। 

•       ঘরের বাইরে থাকাকালীন ঘন ঘন নাকে-মুখে হাত দেয়ার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।

•        স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করুন।

•        এমপক্সের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

এখনো এমপক্সের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। তবে চিকিৎসক এর উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। এর সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সঠিক পরিচর্যা পেলে রোগী দ্রুত সেরে ওঠে।

লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট

মেডিসিন বিভাগ

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন