শীতে অসুখ-বিসুখ ও যত্ন

শীতে বয়স্কদের অসুখ-বিসুখ

কীভাবে যত্ন নেবেন

শীতে বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট

শীতকালে বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। ঠাণ্ডা আবহাওয়া শ্বাসনালি বা ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। যারা আগে থেকে অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য পরিস্থিতি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ সর্দি, কাশি, ফ্লু থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া। কখনো কখনো মৃত্যু ঘটাতে পারে এসব রোগ।

যা করবেন: কোনোভাবেই যেন তাদের ঠাণ্ডা না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাদের জন্য আরামদায়ক গরম কাপড় নিশ্চিত করুন। খাওয়া-দাওয়া ও গোসলসহ অন্যান্য কাজে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করবেন। অ্যাজমা রোগী থাকলে বাড়িতে অবশ্যই ইনহেলার রাখুন।


চর্মরোগ

শীতে বয়স্কদের নানা রকম চর্মরোগ দেখা দেয়। হাত-পা ও গালের চামড়া ফেটে যাওয়া, মুখে, জিহ্বায় ঘা হওয়া এবং খোসপাঁচড়ার মতো সমস্যা হয়।

যা করবেন: বয়স্কদের ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার যেমন ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন, সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। তীব্র রোদে বেশিক্ষণ থাকবেন না। হাত-পায়ের নখ ছোট করে রাখুন। বয়স্কদের ত্বকে স্ক্রাবিং (রুক্ষ কিছু দিয়ে ঘষামাজা) করবেন না।


রিনোড ফিনোমেনন

কতিপয় বাতজনিত রোগের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হাত-পা নীলচে হয়ে যাওয়াকে রেনোড ফিনোমেনন বলে। মূলত রক্তসঞ্চালন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে এমনটি হয়। এতে হাত-পায়ের পাতা ও ঠোঁট নীল হয়ে যায়। এছাড়া কবজি ফুলে যাওয়াসহ হাত ও পায়ের আঙুল ও মাংসপেশিতে ব্যথা হয়ে থাকে। ত্বকে ক্ষত হতে পারে।

যা করবেন: গা-হাত-পা সক্রিয় রাখুন। গরম পানি ব্যবহার করবেন। নিয়মিত গরম সেঁক দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। হাতে-পায়ে মোজা পরিধান করবেন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে এক্ষুনি ছেড়ে দিন।


আর্থ্রাইটিস বা অস্থিসন্ধির ব্যথা

শীতকালে সব ধরনের ব্যথাই বেড়ে যায়। এ সময় শারীরিক পরিশ্রম বা নড়াচড়া কম হয় বলে এ সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। ফলে যারা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিও-আর্থ্রাইটিসসহ অন্যান্য অস্থিসন্ধি বা বাতজনিত ব্যথায় ভোগেন, তাদের জন্য শীতকাল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঋতুতে অ্যানকাইলোজিং স্পেন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাক্টিভ আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি সমস্যাও বাড়ে।

যা করবেন: এ সময় বয়স্করা শুয়ে-বসে থাকবেন না। হালকা কাজকর্ম করুন। ঘরের ভেতরেই ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। অন্তত ১৫-২০ মিনিট গায়ে রোদ লাগতে দিন। এতে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কেটে যাবে।


মানসিক সমস্যা

শীতের প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে মানুষও। এ সময় বয়স্কদের মনোজগতে বিপুল প্রভাব পড়ে। নিজেকে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন মনে করতে থাকেন।

যা করবেন: তাদের বেশি সময় দিন। একা থাকতে দেবেন না। বসে বসে গল্প করা, টিভি দেখা, বাচ্চাদের সঙ্গে আনন্দ করার সুযোগ করে দিন। তাদের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।


হাইপোথারমিয়া

এক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে নেমে আসে। ফলে বিপাকীয় কার্যাবলিসহ শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় ব্যক্তি তার শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারে না এবং শরীরে কাঁপুনি হয়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগী বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

যা করবেন: হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগীর শরীর তাৎক্ষণিকভাবে গরম করার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে গরম চা, কফি বা স্যুপ বেশ উপকারে আসে। পরিধানের জন্য আঁটসাঁট পোশাকের বদলে ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করুন।

ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা

লেখক: ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিক)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন