অ্যাজমা বা হাঁপানি

রোগীদের সতর্কতা ও করণীয়

ডা. মো. সাইদুল ইসলাম

শ্বসনতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ অ্যাজমা বা হাঁপানি। প্রদাহের ফলে শ্বাসনালির মধ্যে কফের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং শ্বসনতন্ত্রের পেশি সংকুচিত হয়ে যায়। দেহে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না। দেহ অক্সিজেন সংকটে পড়ে নানা রকম জটিলতার মুখোমুখি হয়। শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ, বুকে চাপ ইত্যাদি সমস্যা রোগীকে যথেষ্ট ভুগিয়ে থাকে। রোগটি দীর্ঘমেয়াদি। একবার আক্রান্ত হলে বহুদিন পর্যন্ত কষ্ট করতে হয়।

অ্যাজমার লক্ষণ

দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট

ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া

বুকে চাপ অনুভূত হওয়া

কাশি/শুকনো কাশি

শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকে বাঁশির মতো সাঁ সাঁ শব্দ

হঠাৎ দমবন্ধ লাগা

নাকে-মুখে ধুলোবালি গেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া

এ সময় অ্যাজমা রোগীদের করণীয়

আবহাওয়া পরিবর্তনের এ সময়টা অ্যাজমা রোগীদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাপমাত্রার দ্রুত ওঠানামা, যখন-তখন বৃষ্টি—সব মিলিয়ে এখন তাদের একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইদানীং হুটহাট দমকা বাতাস ও বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে না ভেজার চেষ্টা করবেন। দমকা বাতাসে প্রচুর ধুলাবালি থাকে। তাই বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করবেন। খালি পায়ে হাঁটবেন না। বাড়িতে ইনহেলার, নেবুলাইজার এবং অন্যান্য প্রাথমিক ওষুধ রাখবেন। এসবের মেয়াদ আছে কিনা তা অবশ্যই লক্ষ রাখবেন।

কিছুদিন পরই শীতকাল চলে আসবে। প্রতি বছর শীত শুরুর আগে একটি করে ফ্লু ভ্যাকসিন নিলে হাঁপানি রোগী শীতে অনেক ভালো থাকবেন। শোবার ঘরে অতিরিক্ত মালামাল রাখবেন না। জিনিসপত্র ঢেকে রাখবেন, যাতে ধুলোবালি না ওড়ে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে দ্রুত পরিহার করুন।

অ্যাজমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা

পাইরোমেট্রি বা পিক ফ্লো মেট্রি পরীক্ষা: রোগীর শ্বাসনালিতে শ্বাস গ্রহণে বাধা আছে কিনা, তা নির্ণয়ের জন্য এটি করা হয়।

মেথাকলিন চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা: এর মাধ্যমে শ্বাসনালির অতি সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করা হয়।

রক্ত পরীক্ষা: শ্বাসনালিতে ইয়োসিনোফিল ও অন্যান্য নানা কোষীয় উপাদান জমা হয়ে শ্বাসনালি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। রক্তে ও কফে এ ইয়োসিনোফিল ও সিরাম আইজিই মাত্রা বেশি আছে কিনা, তা নির্ণয় করা হয়।

স্কিন প্রিক টেস্ট: অ্যালার্জেন বা ট্রিগার পরীক্ষার জন্য এ টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে সামান্য পরিমাণ অ্যালার্জেন রোগীর ত্বকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

অ্যালার্জি প্যানেল টেস্ট: বর্তমানে অ্যালার্জি প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করে অ্যাজমা রোগীর কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি আছে, তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।

অ্যাজমার ক্ষেত্রে খাবারের ভূমিকা

ব্যক্তিবিশেষে খাবারের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ খেলে কারো কারো অ্যাজমার সমস্যা হয়। আবার কারো ক্ষেত্রে বেগুন খেলে সমস্যা হয়। সাধারণত বেগুন, পুঁইশাক, চিংড়ি, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, পাকা কলা, হাঁসের ডিম ইত্যাদি খাবার অ্যাজমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

অ্যাজমা রোগীদের জন্য উপকারী খাবার

খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাজমা রোগীদের অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। অ্যাজমা রোগীদের জন্য শাকসবজি খুবই উপকারী। শীতকাল আসছে। প্রচুর শাকসবজি পাওয়া যায় এ সময়। এছাড়া গাজর, আপেল, ব্রকলি, আদা, রসুন, মধু, আদা চা হাঁপানি প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।

লেখক: মেডিসিন, অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন