কিডনির যত্ন

প্রস্রাবের সময় ব্যথা: কিডনির সমস্যা নয় তো!

ডা. এএসএম জুলফিকার হেলাল

বিভিন্ন কারণে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত জটিল আকার ধারণ না করলে কিডনি রোগের লক্ষণ খুব একটা প্রকাশ পায় না। আমাদের দেশের অধিকাংশ কিডনি রোগীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, তারা আগে থেকে কিছুই বুঝতে পারেননি। হঠাৎ করেই কিডনি রোগের কথা জানতে পারেন। কারো কারো ক্ষেত্রে খুব বেশি দেরি হয়ে যায়। কেউ কেউ ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কোনো রকমে বেঁচে থাকেন।

প্রস্রাবে ব্যথা হলেই কি কিডনি সমস্যা

প্রস্রাবে ব্যথা, প্রস্রাব কম বা বেশি হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া প্রভৃতি কিডনি রোগের লক্ষণ। তবে কেবল কিডনি সমস্যা হলেই এ উপসর্গগুলো দেখা দেবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ডায়াবেটিস, টিউমার, মূত্রথলির সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পুরুষদের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া, মহিলাদের জরায়ুমুখের প্রদাহসহ নানা কারণে কিডনির ছাঁকনিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রস্রাবে ব্যথা ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন চার-পাঁচবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। নিয়মিত যদি এর চেয়ে বেশি বা কম হতে থাকে তাহলে দ্রুত একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।

কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছে যারা

—উচ্চরক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি।

—যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করছে।

—আগে প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়েছে যাদের।

—পানি কম পান করে যারা।

—ধূমপায়ী।

—অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটি আছে যাদের।

—যাদের পরিবারের কোনো নিকট আত্মীয় আগে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।

—আগে কিডনিতে প্রদাহ হয়েছে এমন ব্যক্তি।

কিডনি রোগের উপসর্গ

—কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমতে থাকা।

—সারাক্ষণ ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভব করা।

—মুখ, হাত, পায়ের গোড়ালি, চোখের নিচে স্থায়ী ফোলা ভাব।

—ঘুমের অসুবিধা হওয়া।

—ত্বকের রঙ পরিবর্তন ও চুলকানি হওয়া।

—ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাব কম হওয়া।

—প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা।

—খাওয়ার অরুচি।

—বমি বমি ভাব।

—কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

—মাংস পেশিতে টান লাগা ও খিঁচুনি হতে পারে।

—সারাক্ষণ শীত অনুভূত হওয়া।

—শ্বাসকষ্ট।

কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেসব খাবার

অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার, চিনি, তামাক প্রভৃতি কিডনির জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি অতিরিক্ত ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর। আমলকী, কামরাঙ্গা এ ফলগুলো ভিটামিন সিতে পরিপূর্ণ। দেহের জন্যও দারুণ উপকারী। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এসব ফল খেলে ও ফলের রস পান করলে কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি আছে। এছাড়া অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার, ধূমপান, মদ্যপান কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

কিডনির সুস্থতায় যা করণীয়

কিডনি সুস্থ রাখতে কিডনি রোগের উপসর্গগুলো সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। উপসর্গগুলো খুব সহজে ধরা দেয় না। তাই ছোট বা সামান্য কিছু চোখে পড়লেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যাদের উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে তাদের সবসময় তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ রোগগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিডনির জটিলতা এড়ানো যায়।

ডায়রিয়া, বমি ও আমাশয়ের মতো রোগগুলোর কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ বেরিয়ে যায়। এতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি বিকল হয়ে যেতে পারে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন পান করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাবে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর ও প্রোস্টেটের সমস্যা থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করা যাবে না। প্রচুর পানি পান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সচেতনতা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করার মাধ্যমে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব।

লেখক: কিডনি, মেডিসিন ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ

কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন