আমাদের শরীরের নানা অঙ্গের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ। খনিজের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান ক্যালসিয়াম। এটি আমাদের দাঁত ও হাড়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। দেহের সুষ্ঠু বিকাশ, হৃদযন্ত্রের মাংসপেশির গঠন ও সংকোচনসহ বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। এছাড়া হাড় গঠনে এবং হাড়ের সুস্থতা নিশ্চিত করতে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অনেক। ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, নখ ভেঙে যাওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়া, পেশিতে ব্যথা, ক্লান্তি, ত্বকের প্রদাহ এমনকি সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়ামের উৎস
আমাদের শরীর নিজে নিজে ক্যালসিয়াম তৈরি করতে পারে না। বাইরে থেকে এ খনিজের জোগান দিতে হয়। ক্যালসিয়ামের সর্বোত্তম উৎস হলো খাবার। ১০০ গ্রাম দুধে ক্যালসিয়াম থাকে ৯৫০ মিলিগ্রাম। একই পরিমাণ পাবদা মাছে ৩১০ মিলিগ্রাম, সামুদ্রিক মাছে ৩৭২ মিলিগ্রাম, শজনে পাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম ও ট্যাংরা মাছে ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম উপস্থিত থাকে। এছাড়া দই, পনির, বাদাম, সয়াবিন, আখরোট, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কচুশাক, পুদিনা পাতা, সরিষা শাক, মিষ্টিকুমড়া ও সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি, ডুমুর, কমলা, নাশপাতি, আঙুর, পেঁপে, কলা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত রোগ
সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা ১০০০ মিলিগ্রাম। আবার পোস্ট মেনোপজাল নারীদের ক্ষেত্রে এবং সত্তরোর্ধ্ব মানুষের ক্ষেত্রে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ থেকে ১৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদে শরীর পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পেলে ছোট-বড় সবার ক্ষেত্রেই নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে শিশুদের রিকেট রোগ হয়। এ রোগে শিশুর দুই পা ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায়। এছাড়া বড়দের অস্টিওপোরোসিস, হাড়ক্ষয়, দাঁতের সমস্যা, চোখের ছানি, মস্তিষ্কের জটিলতাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে নারীদের মেনোপজের পর হাড়ে সঞ্চিত ক্যালসিয়াম কমে যায়, ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
ক্যালসিয়াম যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন
একজন মানুষের হাড়ের ঘনত্ব বেড়ে হাড় সুগঠিত হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় ৯ থেকে ১৮ বছর বয়স। এ সময় নিয়মিত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। মেয়েদের জন্য এটি আরো বেশি জরুরি। মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার দুই বছর আগে ও পরের সময়ের মধ্যে উচ্চতা বাড়ে। এ সময় পূর্ণমাত্রায় ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বা শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় নারীদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
বয়স ৩০ পার হলেই আমাদের হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে যেতে থাকে। মধ্যবয়সে এসে এ কমে যাওয়ার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তখন হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যেহেতু একজন মানুষের হাড়ের ঘনত্ব তৈরি হয়ে যায় অল্প বয়সেই, তাই শৈশব থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। পরবর্তীকালে অস্টিওপোরোসিস ও হাড় ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধের জন্য কম বয়স থেকেই ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ
ল্যাবএইড
স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা